সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বনাশা মাদক। বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। কিশোর-তরুণদের কাছে মাদক সহজলভ্য হয়ে উঠছে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ও যৌথ বাহিনীর অভিযানেও কোনো ফল হয়নি। করোনাভাইরাসে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই সময়ে ঘরে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেছে মাদক কারবারিরা। ক্রমে বেশি করে মাদকের দিকে ঝুঁকছে। এমনকি তরুণী-কিশোরীদের মধ্যেও এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, করোনাকালে দেশের প্রতিটি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। নিজেদের অনুসন্ধানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থীর ইয়াবা আসক্তির তথ্য পেয়েছে গণমাধ্যম, যারা ছুটিতে বাসাবাড়িতে আছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, করোনাকালে মাদক কারবারিরা শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেছে। সারা দেশে এখন মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্রগুলোয় ভর্তি হওয়াদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। তাদের বেশির ভাগই ইয়াবায় আসক্ত। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে দেরি হওয়ার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ অন্যদিকে যাওয়ার সমস্যাগুলোও বাড়তে পারে।
মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের কারণ হয়। অন্যদিকে মাদকসেবীরা যেমন পরিবারের জন্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে চলতে থাকলে সমাজ ক্রমেই পঙ্গু হয়ে যাবে, সব উন্নয়নপ্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকেও বাংলাদেশ যে ক্রমেই ভয়ংকর পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। দেশে মাদকের প্রায় সবটাই আসে বাইরে থেকে অবৈধপথে। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমেই কঠোরভাবে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। মাদকসংক্রান্ত মামলাগুলো ঝুলে থাকে, অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। তাদের জন্য দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা চাই না, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাদকের নেশায় ধ্বংস হয়ে যাক।
মাদকের কারবার বন্ধ করা না গেলে সামাজিক-অর্থনৈতিক সব ধরনের স্থিতিই বিঘ্নিত হবে। মাদকের বিস্তার রোধে কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন করে শুরু করতে হবে অভিযান। সীমান্ত এলাকা থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসা ইয়াবার গডফাদারদের আইনের মুখোমুখি করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে মাদকের বিস্তার রোধ করা যাবে না। শুধু ইয়াবা নয়, সব ধরনের মাদক প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সবার আগে পরিবারকে সচেতন হতে হবে।