বিশ্বকে তথা জ্ঞানবিশ্বকে ধারণ করে শিক্ষাদান ও শিক্ষার প্রসার ঘটাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-গবেষণায়, আন্দোলন-সংগ্রামে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু শতবর্ষ পেরিয়ে আসা এই প্রতিষ্ঠানেও সমস্যার শেষ নেই। শিক্ষা ও আবাসনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নেই। গত ২৩ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ হাজার ৯৮ জন শিক্ষার্থী বাড়লেও হলগুলোতে আসনসংখ্যা বেড়েছে মাত্র পাঁচ হাজার ৬৯৬টি।আবাসনসংকট প্রকট হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে দুর্বিষহ গণরুম ব্যবস্থার। হলগুলোর ১০২টি গণরুমে মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতি শিক্ষাবর্ষ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বার্ষিক বিবরণী প্রকাশ করে। সেই বিবরণী থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৮৩টি বিভাগ ও ১২টি ইনস্টিটিউটের মোট ৪৪ হাজার ৮৯৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ হাজার ২০৩ জন বা ৫৬ শতাংশ ২৩টি হল ও হোস্টেলে আবাসিক হিসেবে আছে।হলগুলোতে ১৬ হাজার ৫৩টি আসন থাকলেও ৯ হাজার ১৫০ জন বা ৫৭ শতাংশ বেশি শিক্ষার্থী থাকছেন। আবাসন সমস্যার প্রধান কারণ হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় সংখ্যক হল ও হোস্টেল তৈরি করেনি।
অথচ নতুন নতুন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বাড়িয়েছে। গত ২৩ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ হাজার ৯৮ জন শিক্ষার্থী বাড়লেও আসনসংখ্যা বেড়েছে মাত্র পাঁচ হাজার ৬৯৬টি। অর্থাত্ একের পর এক নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে অবকাঠামো সুবিধা না বাড়িয়েই।দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের উচ্চশিক্ষাদানের দায়িত্ব যে প্রতিষ্ঠানটির কাঁধে, তার এত দুর্বলতা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যাচর্চার চেয়ে রাজনীতি বড় হয়ে উঠেছে।ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসনব্যবস্থাটিতে এক শ্রেণির ছাত্রনেতার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ থেকেও যেন নেই।এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এর জন্য নিতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। আবাসনসংকট দূর করতে নতুন নতুন হল নির্মাণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তৈরি করতে হবে লেখাপড়ার প্রকৃত পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবে—এটিই প্রত্যাশা।