সারা দেশে প্রকৃতি ও প্রতিবেশব্যবস্থা ধ্বংসকারী নানা ধরনের অপতৎপরতা ভয়ংকরভাবে এগিয়ে চলেছে। যাঁরা এগুলো বন্ধ করার কথা, অজ্ঞাত কারণে তাঁরা তা করছেন না। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষের অনেকের বিরুদ্ধে অবৈধ কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগও রয়েছে। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে এমন অনেক খবর আসছে।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে টিলা কাটার রীতিমতো মহোৎসব চলছে। টিলার লাল মাটি চলে যাচ্ছে উপজেলায় থাকা অর্ধশতাধিক ইটখোলায়। এভাবে গত পাঁচ বছরে এখানকার শতাধিক টিলা কেটে সমতলভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। বগুড়ার ধুনটে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। ফলে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, জনবসতি ও আবাদি জমি। পরিবেশবিধ্বংসী ও জনস্বার্থবিরোধী এসব কর্মকাণ্ড ঠেকাবে কে?
জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক টিলা রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি ইউনিয়নে রয়েছে সবচেয়ে বেশি লাল মাটির টিলা। কোনো কোনো টিলার উচ্চতা ৫০ থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত। স্থানীয় প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে দিনে-দুপুরে এসব টিলা কাটা হচ্ছে। অনেক জনপ্রতিনিধিও এর সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। প্রশাসন চোর-পুলিশ খেলার মতো মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও তাতে বন্ধ হয় না টিলা কাটা।
তিন মাস ধরে বেলুয়াটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে থাকা টিলা কাটা হচ্ছে। সেখানে টিলার জায়গায় এখন বড় গর্ত হয়ে গেছে। তার পাশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। আইন অনুযায়ী শুধু সরকারি নয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় বা টিলাও কাটা যাবে না। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সেই আইনের প্রয়োগ কোথায়?
অন্য এক খবরে প্রকাশ, বগুড়ার ধুনটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা মিলেমিশে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন। ফলে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, জনবসতি ও আবাদি জমি। শুধু নদী নয়, চর এলাকা থেকেও খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে। জানা যায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ২০ জন নেতার একটি সিন্ডিকেট এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে। চরে বসতি স্থাপনকারীরা তাদের বাধা দিতে সাহস পাচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও তারা কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। তাহলে তারা কোথায় যাবে?
সারা দেশে যেখানে পাহাড় বা টিলা আছে, সেখানেই রয়েছে মাটিখেকোদের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা। রয়েছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এগুলো বন্ধ করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।