পাহাড়ধসে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যু হয়। বড় ধরনের পাহাড়ধসের পর দেশব্যাপী আলোড়ন তৈরি হয়। একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সেসব কমিটির প্রতিবেদনে অবিলম্বে পাহাড় কাটা বন্ধ করাসহ অনেক সুপারিশ করা হয় কিন্তু বাস্তবে প্রায় কিছুই করা হয় না।
এর প্রমাণ প্রকাশিত প্রতিবেদন। এতে বলা হয়, কক্সবাজারের উখিয়ায় বেশ কিছু সিন্ডিকেট এক্সকাভেটর, ড্রাম ট্রাক ও আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে অবাধে পাহাড় কেটে চলেছে। পাহাড় কাটার সময় সশস্ত্র পাহারাও থাকছে। সাধারণ মানুষ তাদের ভয়ে কোনো কথা বলছে না। এমনকি বন বিভাগের কর্মীরাও তাদের ভয়ে তটস্থ থাকেন। এরই মধ্যে অনেক পাহাড় কেটে তারা সমতল ভূমিতে পরিণত করেছে।
১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী দেশে পাহাড় বা টিলা কাটা নিষিদ্ধ। ২০১০ সালে আইনটি সংশোধন করে আরো কঠোর করা হয়েছে। কিন্তু লাভ কী, যদি আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন না থাকে। এই পাহাড়খেকোরা কি রাষ্ট্রের চেয়ে বেশি শক্তিশালী? তা না হলে সংশ্লিষ্ট আইন বাস্তবায়ন করা হয় না কেন? জানা যায়, অত্যন্ত প্রভাবশালী পাহাড়খেকো চক্রকে রীতিমতো ভয় করে চলেন বন বিভাগের স্থানীয় কর্মীরা। একজন বন কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে আমরা রীতিমতো জীবন বাজি রেখে চাকরি করছি। তা সত্ত্বেও গত দুই মাসে ছয়টি মামলা করেছি। ’ অন্য এক বন কর্মকর্তা জানান, গত তিন বছরে পাহাড় কাটার ঘটনায় ৯৮টি মামলা করা হয়েছে।
এসব মামলায় ১২৩ জন আসামি রয়েছে। কিন্তু পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। জানা যায়, গত মাসে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ পাহাড় কাটা বন্ধ করতে অভিযান চালানো হয়েছিল। সে সময় দুটি বন্দুক এবং ৩০টি কিরিচসহ অন্যান্য অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ‘ভাগ্যিস, সঙ্গে পুলিশের দল ছিল। আমার জানা ছিল না পাহাড় যারা কাটে তারা সঙ্গে এত অস্ত্রশস্ত্র রাখে। ’
শুধু উখিয়া নয়, দেশের যেখানেই পাহাড় আছে, সেখানেই পাহাড়খেকোদের এমন সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। যারা দিনরাত সমানে পাহাড় কেটে চলছে। পত্রপত্রিকায় পাহাড় কাটা নিয়ে প্রতিনিয়ত খবর প্রকাশিত হচ্ছে কিন্তু পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না। অভিযোগ আছে, স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে গোপন যোগসাজশ রয়েছে। তাহলে এত কঠোর আইন, এত দপ্তর, এত তদন্ত কমিটি করে লাভ কী?
আমরা আশা করি, পাহাড় রক্ষায় দেশের প্রচলিত আইন বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উখিয়ায় পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। পাহাড় কাটার অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোর বিচারিক কার্যক্রম যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করাও প্রয়োজন।