দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়, তাতে সরকারি হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনা আর বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের বাণিজ্যের বিষয়টিই উঠে আসে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি চিকিৎসকদের অনেকেই নিজেদের কর্মস্থলের চেয়ে ক্লিনিকের প্রতি বেশি মনোযোগী।
প্রকাশিত খবরটি চমকে ওঠার মতো। এটা কেমন করে সম্ভব! বরগুনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে সেখানকার বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ঘুরে শেষে রাস্তায় সন্তান প্রসব করেছেন দরিদ্র এক নারী।
এ ঘটনায় নবজাতক শঙ্কামুক্ত হলেও রীমা নামের ওই নারীর অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গর্ভবতী এই নারীকে গত মঙ্গলবার সকালে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর শুরু হয় তাঁর প্রসব বেদনা। রাত ১০টা পর্যন্ত প্রসব বেদনা নিয়ে তিনি হাসপাতালে কাতরাচ্ছিলেন। কিন্তু বরগুনা সদর হাসপাতালে ওই সময় দায়িত্বরত ডাক্তার ও নার্স ওই নারীর স্বজনদের জানিয়ে দেন, সেখানে তাঁর প্রসব করানো সম্ভব নয়। বলা হয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যেতে। উপায় না পেয়ে স্বজনরা তাঁকে ওই ক্লিনিকে নিয়ে যান।
কিন্তু ওই ক্লিনিকে ডাক্তার না থাকায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাঁকে আরেকটি ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলে। সেই ক্লিনিকে গিয়েও ডাক্তার পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতায় প্রসূতিকে অন্য আরেকটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পথে রাত সোয়া ১২টার দিকে রাস্তায়ই একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন তিনি। শেষে প্রসূতি ও নবজাতককে উদ্ধার করে একটি ক্লিনিকে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
শুধু এই একটি খবর নয়। প্রকাশিত আরেকটি খবরে বলা হয়েছে, একটিমাত্র সার্জনের পদ থাকলেও তা দিনের পর দিন শূন্য থাকায় গত বছরের মার্চ থেকে রাজবাড়ী জেলা শহরের সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বন্ধ হয়ে গেছে প্রসূতিদের সিজারিয়ান কার্যক্রম। এতে রাজবাড়ী জেলার হাজারো প্রসূতি মা সরকারি এই সেবা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই জেলার পাংশা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রেও চিকিৎসক নেই। বালিয়াকান্দিতে রয়েছেন মাত্র একজন। আর গোয়ালন্দ ও কালুখালীতে রয়েছেন মাত্র একজন করে চিকিৎসক।
আজকের বাংলাদেশে এটা কেমন করে সম্ভব? এখানে চিকিৎসক থেকে শুরু করে সবাইকে সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, চিকিৎসাকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ যখন বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, তখন বরগুনার ঘটনা চিকিৎসাক্ষেত্রে দেশের সুনামের ক্ষতি করছে।