বৃষ্টি-বাদল ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বাড়ছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা। এরই মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ২০ মে পর্যন্ত মোট ২৩৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
তাদের মধ্যে ২১১ জন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ২৩ জন রোগী এবং তাদের সবাই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।
ডেঙ্গু বেশি ছড়ায় বর্ষাকালে। বৃষ্টির পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার দ্রুততর হয়। এই মশা খুব সামান্য পানিতেই প্রজনন করতে পারে। মানুষ যত্রতত্র পলিথিন, ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র ফেলে রাখে। সেগুলোতে বৃষ্টির যে সামান্য পানি জমা হয় তাতেই এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া অনেকে ছাদে, বারান্দায় ফুলের টব রাখে এবং সেগুলোতে পানি জমে থাকে। অনেকের ঘরেও ছোটখাটো পাত্রে পানি জমিয়ে রাখা হয় এবং তাতে মশা ডিম ছাড়ে।
নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে তো রীতিমতো মশার চাষ করা হয়। এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে মশা প্রজননের উৎস ধ্বংস করা অত্যন্ত জরুরি। শহর এলাকায় দুই বাড়ির মধ্যখানে রীতিমতো আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। সিটি করপোরেশনের লোকজন ওষুধ ছিটানোর জন্যও সেসব জায়গায় ঢুকতে পারে না। এভাবে শহরাঞ্চলে মশার বংশবিস্তার দ্রুততর হয় এবং ডেঙ্গু দ্রুত ছড়ায়।
বর্ষার আগে আগে, বিশেষ করে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে মশানিধনে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। অভিযোগ আছে, এ সময় দুই সিটি করপোরেশনেরই অভিযান দুর্বল ছিল। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ১০ দিনের বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার ছিল তার তৃতীয় দিন। এদিন বিভিন্ন স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় মোট ১৬টি মামলা করা হয় এবং দুই লাখ ৭৯ হাজার ঢাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
কিন্তু শুধু জরিমানা আদায় করে কি মশার বংশবৃদ্ধি ঠেকানো যাবে? গত বছর সারা দেশে ২৮ হাজার ৪২৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে মারা যায় ১০৫ জন। তার পরও মানুষের মধ্যে সচেতনতা জন্ম নেয় না কেন? কেন এখনো ঘরে ঘরে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়?
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি হতে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেও অনুরূপ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। তার পরও আমাদের দুই সিটি করপোরেশনের মশানিধন কর্মসূচি যতটা জোরেশোরে হওয়া প্রয়োজন ছিল, তা হয়নি। এখনই এডিস মশা নিধনে উঠেপড়ে লাগতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। নাগরিকদেরও আরো বেশি সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে।