আগাম বন্যায় হাওরাঞ্চলে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু হাওর নয়, পানি বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে দেশের অনেক অঞ্চলে কৃষকরা ঠিকমতো বোরো ধান ঘরে তুলতে পারেননি। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে বন্যার আলামত। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এক দিনের মধ্যে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে।
জেলার গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের পর কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার সব কটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। তিনটি স্থানে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তদুপরি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের মতে, আগামী ২৩ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। আগামী শুক্রবার রাত থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে উজানে অর্থাৎ ভারতের আসাম, মেঘালয় রাজ্যেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেখানে বন্যা দেখা দিয়েছে। তাই উজান থেকে আসা প্রবল পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতির রুদ্র রূপ ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস বা গ্রীষ্মকালে এমন বৃষ্টি, বন্যা সচরাচর হয় না। অথচ এ বছর এপ্রিলের শুরু থেকে অর্থাৎ চৈত্র মাসেই হাওরাঞ্চলে বন্যা হয়েছে। নিম্নাঞ্চলগুলোতে ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে।
আর জৈষ্ঠ্যের শুরুতে হাওরাঞ্চল ছাড়াও মূল ভূমিতে শুরু হয়েছে বন্যার তাণ্ডব। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রবিবার ভোর থেকে সীমান্তঘেঁষা জৈন্তাপুর উপজেলায় দ্রুত পানি বাড়তে থাকে। দিনের মধ্যে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় সব কটি ইউনিয়ন জলমগ্ন হয়ে যায়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ১৩৪টি গ্রামের অন্তত ১২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলায় ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষকে কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ২৬৪টি গ্রামের অর্ধেকের বেশি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পৌরসভা এলাকার বাসাবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি অফিসেও পানি ঢুকেছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিন বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে এবং পানি দ্রুত বৃহত্তর সিলেটের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোও প্লাবিত করবে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, উপদ্রুত এলাকাগুলোর লাখ লাখ মানুষ দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। প্রশাসন থেকে কিছু কিছু সহযোগিতা করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি নগণ্য।
বন্যা-জলাবদ্ধতার দৃশ্যমান ক্ষতি ছাড়াও অনেক ধরনের ক্ষতি রয়েছে। সবজির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাজারে সবজির দাম বেড়ে যেতে পারে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট প্রবল হতে পারে।
কাজকর্ম হারিয়ে নিম্ন আয়ের লোকজনের জীবনযাত্রা আরো কঠিন হয়ে পড়বে। তা ছাড়া পানিবাহিত রোগব্যাধি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। আর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকার হিসেবে খননের মাধ্যমে নদ-নদীর নাব্যতা বাড়াতে হবে, যাতে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নেমে যেতে পারে।