দেশে একসময় হাজারের বেশি নদী ছিল বলে দাবি করা হয়। ৭০০ নদীর তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। আর এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে মোট নদীর সংখ্যা ৪৩০। এর অর্থ, বাকি নদীগুলো হারিয়ে গেছে।
কোনো রকমে টিকে থাকা নদীগুলোরও একটি বড় অংশ হারিয়ে যাওয়ার পথে। আর তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের কৃষিতে। প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। উপর্যুপরি বন্যার কারণে ব্যাপক ফসলহানি হচ্ছে। নৌপথ হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নদী রক্ষায় পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়া না হলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। অথচ সারা দেশেই চলছে নদী হত্যার ব্যাপক আয়োজন।
সংস্কারের অভাবে আমাদের বেশির ভাগ নদীর অন্তিমদশা। ভূমি ক্ষয় এবং উজানের ঢলের সঙ্গে আসা পলি নদীগুলো দ্রুত ভরাট করছে। কলকারখানা ও গৃহস্থালি বর্জ্যও নদী ভরাট করছে। অপরিকল্পিত বাঁধ, স্লুইস গেটও অতীতে অনেক নদীর অপমৃত্যুর কারণ হয়েছে। এর ওপর আছে লোভী মানুষের হস্তক্ষেপ। নদী ভরাট করে নদীর জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে আসছে নদী হত্যার এমন অনেক খবর।
প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের সাঁকোর ঘাট এলাকায় কাঁচামাটিয়া নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানানো হয়েছে। এর ফলে নদীতে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। একই ধরনের খবর এর আগেও এসেছে। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় আড়িয়ালখাঁ নদের ওপর মাত্র পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় পাঁচটি বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর একটি অংশের পুনঃখননের কাজ শেষ হতে না হতেই বালু ব্যবসায়ীরা নদীর বুকে মাটি ভরাট করে রাস্তা বানিয়েছে। খুলনার শৈলমারী বা শোলমারী নদীটির অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। স্লুইস গেটের কারণে দ্রুত ভরাট হওয়া নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে কয়েকটি ইটখোলা। ২০১৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, খুলনার পাঁচটি উপজেলায় নদীর জায়গা দখল করে মোট ২৭টি ইটখোলাসহ বহু স্থাপনা গড়ে উঠেছে। অনেক জায়গায় নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার খবরও পাওয়া যায়। সারা দেশেই চলছে নদী হত্যার এমন আয়োজন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ব্যাপারে প্রশাসন থাকে নির্বিকার।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জের রাজীবপুর ইউনিয়নের একটি অংশের মানুষ নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। তারা সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করছিল। দশকের পর দশক জনপ্রতিনিধিরা তাদের সেতু করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে আসছিলেন। ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ গত ঈদের সময় স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নদীর বুকে মাটি ফেলে কাঁচা রাস্তাটি নির্মাণ করে। কিন্তু এটি কোনো সমাধান নয়। এতে নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে নদীর মৃত্যু ত্বরান্বিত হবে। বন্যা ও জলাবদ্ধতায় তারা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমরা মনে করি, দ্রুততম সময়ে সেখানে একটি সেতু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর আগে বেইলি ব্রিজ বা অন্য কোনো উপায়ে তাদের চলাচলের ব্যবস্থা করে বাঁধ দ্রুত অপসারণ করতে হবে। পাশাপাশি সারা দেশেই নদীর প্রবাহ ঠিক রাখার ব্যাপারে প্রশাসনকে আরো উদ্যোগী হতে হবে।