দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণও আশাব্যঞ্জক। সরকারপ্রধান, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রীসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে নারীর জয়জয়কার। পুরুষের পাশাপাশি সব ক্ষেত্রেই কাজ করছে নারী।
শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো করছে। সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের নারী জাগরণ সাড়া ফেলেছে। আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এসেছে। কিন্তু আমাদের সমাজে নারী নির্যাতনের সেই পুরনো চিত্রই রয়ে গেছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের এপ্রিলে ২৪৩ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮০ জন। এর মধ্যে তিনজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে ২৪৩ জনের মধ্যে ৩৩ কন্যাশিশুসহ ৪৭ জন ধর্ষণের শিকার, ১৮ কন্যাশিশুসহ ৩০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, দুই কন্যাশিশুসহ তিনজন ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ছয় কন্যাশিশুসহ আটজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
দুই কন্যাশিশুসহ সাতজন শ্লীলতাহানি, সাত কন্যাশিশুসহ ৯ জন যৌন নিপীড়ন এবং একজন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছে। তিনজন অগ্নিদগ্ধের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ১০ কন্যাশিশুসহ ১১ জন অপহরণ ঘটনার এবং এক কন্যাশিশু অপহরণচেষ্টার শিকার হয়েছে।
নারী ও কন্যাশিশু পাচারের ঘটনা ঘটেছে একটি। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩ জন। এর মধ্যে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১০ কন্যাশিশুসহ ২৬ জন। ১০ কন্যাশিশু উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে দুই কন্যাশিশু আত্মহত্যা করেছে। বিভিন্ন কারণে তিন কন্যাশিশুসহ ২৯ জনকে হত্যা এবং একজনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
কেন এমন ঘটনা ঘটছে? বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ব্যক্তি সম্পর্কে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা হ্রাস পেয়েছে। ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বিচার পেতে বিলম্ব হওয়া। নারী ও শিশু ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক অবক্ষয়কে দায়ী করছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মতো অপরাধ বন্ধ করতে আইনের সঠিক প্রয়োগ জরুরি।
দেশে মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটেছে। সমাজ ক্রমেই বর্বরতার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাওয়ায় আমাদের সমাজের পরিচয়টাই যেন পাল্টে যাচ্ছে। সে কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। বিলম্বিত বিচার কিংবা বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
প্রতিদিনই যেন প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে নারীকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। নারীর অবস্থার উন্নয়নে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি। বাড়ি ও কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বদলে দিতে না পারলে নারী নির্যাতন কমবে না। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। বাড়াতে হবে নাগরিক সচেতনতা। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক সংগঠনগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সবার সর্বাত্মক সহযোগিতায় নারী নির্যাতন রুখে দেওয়া সম্ভব।