গ্যাস ছাড়া নাগরিক জীবন প্রায় অচল। তাই সবারই চেষ্টা থাকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ বা গ্যাসের সরবরাহ। কিন্তু এই অতি জরুরি পণ্যটির সরবরাহ নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। এমন পরিস্থিতিতেও গ্যাসের দাম ক্রমাগত বাড়ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রোজার ঈদের পর আবার এক দফা গ্যাসের দাম বাড়তে পারে। বর্তমানে দুই চুলার জন্য নির্ধারিত বিল দিতে হয় মাসে ৯৭৫ টাকা। এখানে ব্যয় সাশ্রয় করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু যাঁরা প্রিপেইড মিটার পেয়েছেন তাঁদের দিতে হয় অনেক কম। প্রিপেইড মিটারের অনেক গ্রাহকই জানিয়েছেন, তাঁদের গ্যাসবাবদ দুই চুলায় মাসে খরচ হয় ৫০০ টাকার মতো। অর্থাৎ মাসে তাঁদের সাশ্রয় হয় আরো প্রায় ৫০০ টাকা। এ কারণে এখন গ্যাসের গ্রাহকরা প্রিপেইড মিটার নিতে বেশি ইচ্ছুক। কিন্তু কম্পানিগুলো কেন যেন এখন মিটার সরবরাহে অত্যন্ত ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে। অনেকে দীর্ঘদিন আগে আবেদন করেও প্রিপেইড মিটার পাচ্ছেন না।
প্রিপেইড মিটার থাকলে মানুষ খরচ বাঁচানোর জন্য গ্যাস ব্যবহারে অনেক সাশ্রয়ী হয়। রান্না শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলা নিভিয়ে দেয়। এতে জাতীয় সম্পদ গ্যাসের অপচয়ও অনেক কম হয়। এ কারণেই সরকার প্রিপেইড মিটার চালু করার উদ্যোগ নেয়।
পরীক্ষামূলকভাবে মিটার প্রদানের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। বাণিজ্যিকভাবে বাসাবাড়িতে মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। শুরুতে সরকারের গ্যাস বিতরণকারী কম্পানিগুলোও যথেষ্ট আগ্রহী ছিল মিটার স্থাপনে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তাঁদের আগ্রহে ভাটা পড়ে। বর্তমানে ছয়টি গ্যাস বিতরণকারী কম্পানির অধীনে আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা ৪৩ লাখের মতো। পাঁচ বছরে তাঁরা মাত্র ১০ শতাংশের মতো গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দিতে পেরেছে।
অর্থাৎ ৯০ শতাংশ গ্রাহক এখনো প্রিপেইড মিটার পাননি। প্রিপেইড মিটার স্থাপনে কম্পানিগুলোর আগ্রহের এত অভাব কেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।
জানা যায়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দুই চুলার একজন গ্রাহক ৭৭ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করবে এই অনুমান থেকে দাম নির্ধারণ করেছিল ৯৭৫ টাকা। প্রিপেইড মিটারে দেখা যায়, দুই চুলায় গড়ে একজন গ্রাহক ব্যবহার করেন ৪০ ঘনমিটার গ্যাস। তাহলে প্রতি মাসে একজন গ্রাহকের কাছ থেকে গড়ে ৩৭ ঘনমিটার গ্যাসের দাম অতিরিক্ত নেওয়া নৈতিকও নয়। আমরা আশা করি, বিইআরসি এ ব্যাপারে দ্রুত সঠিক পদক্ষেপটি নিতে সক্ষম হবে। এর আগে গ্যাসের দাম না বাড়ানোই যৌক্তিক হবে।