সারা দেশেই বহুতল ভবন তৈরির ধুম লেগেছে। গড়ে উঠছে ছোট-বড় নানা ধরনের অবকাঠামো। আর এসব নির্মাণকাজে প্রয়োজন হচ্ছে প্রচুর বালুর। বালুর সেই চাহিদা মেটাতে গিয়ে সারা দেশেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য বালু সিন্ডিকেট।
এরা যেমন অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু তুলে নদীভাঙনকে উসকে দিচ্ছে, তেমনি পাহাড়ের নিচ থেকে বালু তুলে পাহাড় ধসকে ত্বরান্বিত করছে। ফসলি জমিতেও ঘটছে এদের আগ্রাসন। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার জঙ্গল পুঁইছড়ি এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অন্তত ১৭টি স্পট থেকে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পাহাড়ি ছড়া থেকে বালু তুলতে ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। শত শত ট্রাকে সেসব বালু পরিবহন করা হচ্ছে। এমনকি বালু পরিবহনের জন্য সংরক্ষিত বন ও পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো হয়েছে। পাহাড়ি জনপদের পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় রাস্তার পাশে ৩৫টি স্পটে বালুর মজুদ গড়ে চলে বেচাকেনা। দিনের পর দিন চলে আসছে এমন বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড। অথচ সেসব বন্ধে প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন থেকে এখানকার বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছিল। পরে পাহাড়ি ঢলে স্থানীয় জনপদে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ২০২০ সালের এপ্রিলে ইজারা বাতিল করা হয়। কিন্তু বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। স্থানীয়দের মতে, বালু উত্তোলন আরো বেড়েছে। প্রশাসন কেন এমন ক্ষতিকর বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। সারা দেশেই চলছে এভাবে অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলনের হিড়িক। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার দক্ষিণ লামকুপাড়া এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে পাহাড়ি ছড়ার ওপর স্থাপিত ২৬ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে দুধকুমার নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় সেখানে থাকা শতবর্ষী সোনাহাট রেল সেতুটি হুমকিতে পড়েছে। সারা দেশে মাটি ও বালু উত্তোলন নিয়ে যা ঘটছে তাকে অনেকেই চরম অরাজকতা মনে করছেন। এই অরাজকতা কি বন্ধ হবে না?
নির্মাণসামগ্রী হিসেবে বালুর চাহিদা বেড়েছে এবং বাড়তেই থাকবে। বৈধ উপায়ে বালুর জোগান নিশ্চিত করার জন্য সরকার পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে নদী থেকেও বালু উত্তোলন করা যেতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই অবৈধ বালু উত্তোলন চলতে দেওয়া যায় না। আমরা আশা করি, স্থানীয় জনজীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে বাঁশখালীতে যেভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তা দ্রুত বন্ধ করা হবে।