আমাদের সমাজের পরিচয় যেন পাল্টে যাচ্ছে। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সহনশীল সমাজের বন্ধন আজ আর নেই। নৈতিকতাও যেন নির্বাসিতপ্রায়। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে।
প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ছোট শিশুরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, পাবনার সুজানগর উপজেলার মহনপুর গ্রামে মা-বাবার অনুপস্থিতির সুযোগে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। থানায় অভিযোগ জানানোর পর দুই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বরগুনায় চার বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় মামলা করার পর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে ধর্ষক। ধর্ষক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় পুলিশের একজন উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় সম্ভ্রম বাঁচাতে এসআইকে কুপিয়েছেন ওই নারী। সিলেটের মুরারি চাঁদ কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার তরুণীর স্বামীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নির্যাতিতার স্বামী সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানায় গত সোমবার রাতে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
ধর্ষণের ঘটনা দিনের পর দিন বাড়ছে। কেন এমন হচ্ছে? কঠোর আইন থাকলেও মামলা করা থেকে শুরু করে তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি কারণে মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে চিকিৎসা সহায়তা নিতে আসেন ২২ হাজার ৩৮৬ জন নারী। এর ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে মামলা হয়েছে, যার মধ্যে রায় ঘোষণার হার ৩.৬৬ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনায় জড়িত, তাদের একটি অংশ ‘পাওয়ার রেপিস্ট’। এরা প্রভাবশালী অথবা প্রভাবশালীর আশীর্বাদপুষ্ট। আরেক ধরনের ধর্ষক আছে, যারা বিকৃত রুচিবোধ থেকে এসব করে। বিশ্লেষকদের মতে, এখন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন সেক্টরে অপরাধীচক্র গড়ে উঠেছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিকারের পাশাপাশি আগে প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে জোর দিয়েছেন সমাজ বিশ্লেষকরা।
সবার আগে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা গেলে এ ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা কমবে।