আমাদের সমাজজীবনে চাঁদাবাজি শব্দটা একেবারেই অপরিচিত নয়। সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি দেশে নতুন নয়। সারা বছরই চলতে থাকে অল্পবিস্তর। চাঁদাবাজি প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে চলেছে।
পরিবহন খাত থেকে শুরু করে ফুটপাতের ব্যবসা—সর্বত্রই চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধেও পাওয়া যায় চাঁদাবাজির অভিযোগ, বিশেষ করে সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনা তো ওপেন সিক্রেট। দেশের স্থলবন্দরগুলোতেও বিভিন্ন নামে চাঁদা আদায় করা হয়।
সারা দেশে চলাচলকারী পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এর প্রভাব পড়ে পণ্যের দামের ওপর। দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির প্রথম সভায় শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
চাঁদাবাজির কারণে একদিকে যেমন পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পকেট থেকে বাড়তি পয়সা গুনতে হচ্ছে, অন্যদিকে এই চাঁদাবাজির শেষ পর্যন্ত মাসুল গুনতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকেই। ট্রাকের ভাড়ায় চাঁদাবাজির টাকা যুক্ত হওয়ায় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও বাজারে তাজা শাকসবজির দাম বেশি। পথে পথে চাঁদাবাজির কারণে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। বৈঠকে চাঁদাবাজি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
খুচরা পর্যায়ে মূল্যতালিকা প্রদর্শন ও প্রতিটি ধাপে রসিদ সংরক্ষণ নিশ্চিতকরণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ১৬ দফা সুপারিশ করেছে সম্প্রতি গঠিত দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক এই টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্সের অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে—সমুদ্র ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং শুল্ক স্টেশনগুলো রমজানের সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাসে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার; ফেরিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের গাড়ি পারাপারে বিআইডাব্লিউটিসি কর্তৃক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার; ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে; কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুদকারীর বিষয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বাড়ানো; নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা দান; পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে অতিরিক্ত মুনাফার বিষয়ে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি ইত্যাদি।
দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।