যানজটের ভোগান্তি এখন ঢাকাবাসীর নিয়তি। কখনো কখনো ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এক ঘণ্টা নয়, দুই-তিন ঘণ্টাও লেগে যায়। ঢাকার যানজট বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে।
কয়েক বছর আগের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যানজট নিরসনে যথাযথ উদ্যোগ না নিলে ২০২৫ সালের মধ্যে যানবাহনের গতি হবে প্রতি ঘণ্টায় চার কিলোমিটার। এখন প্রতিদিন যানজটের কারণে কয়েক লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। প্রতিবছর অর্থনীতিতে ক্ষতি হচ্ছে কয়েক বিলিয়ন ডলার। যানজটের কারণে নগরায়ণের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার অনেক কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।
যানজটে নষ্ট হচ্ছে অতিরিক্ত সময়। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হচ্ছে। ঘটছে পরিবেশদূষণ। দূষণের ফলে দেখা দিচ্ছে নানা স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজটের কারণে শব্দদূষণ ঘটছে। যানজট বাধলেই চারপাশ থেকে হর্ন বাজানো শুরু হয়। যানবাহনে ব্যবহৃত হচ্ছে হাইড্রোলিক হর্ন।
বছর দুয়েক আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শব্দদূষণ শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নেই, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ওই একই সময়ে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, তীব্র শব্দদূষণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ১১.৮ শতাংশ সদস্যের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১৬ ও ২০১৭ সালে সারা বাংলাদেশে, বিশেষ করে আটটি বিভাগীয় সদরের শব্দদূষণের পরিমাপ করে। সেখানে দেখা যায়, শব্দদূষণের জন্য মূলত গাড়ির হর্ন সবচেয়ে বেশি দায়ী।
শব্দদূষণে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও উদ্বেগজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। দিনের পর দিন শব্দদূষণের শিকার শিশুদের কোনো কিছুতে মনোযোগ দেওয়ার ও পঠিত বিষয় আত্মস্থ করার ক্ষমতা লোপ পেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, সড়কের খানাখন্দ, নির্মাণকাজের জন্য রাস্তা ছোট হয়ে আসা, করোনা-পরবর্তী সময়ে সব প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়া এবং সড়কে অতিরিক্ত ছোট যান যানজটের অন্যতম কারণ। সারা ঢাকাই এখন বিপণিবিতানের শহর হয়ে গেছে। প্রতিটি বিপণিবিতানের সামনেই দেখা যায় অবৈধ পার্কিং। যানজট তাতেও বাড়ছে। রাজধানীতে কয়েক বছর ধরেই মেট্রো রেলের তোড়জোড় চলছে। কিন্তু নিচের সড়কগুলো যে চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে, সেদিকে কারো নজর পড়ছে না।
মেনে নিতে হবে, রাজধানীতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক রাস্তা নেই। কিন্তু যে সড়ক রাজধানীতে আছে, সেখানে কি শৃঙ্খলা আছে? সড়ক ব্যবস্থাপনায় কি কোনো ত্রুটি নেই?
দীর্ঘদিনের সমন্বয়হীনতা যে মহানগরীকে প্রায় স্থবির অবস্থায় এনে ফেলেছে, এ থেকে মুক্ত হতে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। সমস্যা সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্গতি কী করে কমিয়ে আনা যায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা না ফিরলে যানজট সমস্যার সমাধান হবে না।