নির্মাণসামগ্রী হিসেবে বালুর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বালু ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের অবৈধ সিন্ডিকেট। সারা দেশেই নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বাড়ছে নদীভাঙন। বাড়িঘর, ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে।
বালুর ব্যবসা ও পরিবহনের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা রকম সিন্ডিকেট। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ট্রাকচালক ও বালু ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে গড়ে উঠেছে চোরাই বালু বিক্রির আরেক ধরনের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন বালুর ক্রেতারা। সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বালু ব্যবসা চালানোর কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। অথচ স্থানীয় প্রশাসন এই অবৈধ ব্যবসা রোধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ট্রাকচালকরা নেত্রকোনা থেকে বালু নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যান। নেত্রকোনা থেকে ট্রাকগুলোতে সর্বোচ্চ পরিমাণে বালু বোঝাই করা হয়। জানা যায়, প্রতিটি ট্রাকে ৫৫০ থেকে ৬০০ বর্গফুট বালু নেওয়া হয়। যাওয়ার সময় ময়মনসিংহ সদরের চুরখাই মোড় থেকে ত্রিশাল উপজেলার বগারবাজার এলাকার মধ্যে ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা শতাধিক স্পটে ট্রাক থেকে অনেক বালু ফেলে যান ট্রাকচালকরা। জানা যায়, একেকটি ট্রাক থেকে ১০০ থেকে ১৫০ বর্গফুট পর্যন্ত বালু ফেলে যাওয়া হয়। অর্থাৎ এই পরিমাণ বালু ক্রেতার কাছে কম পৌঁছানো হয়। পরে স্পটগুলোতে বালু জমিয়ে এবং পানি দিয়ে ফুলিয়ে আবার একই দামে সেই বালু বিক্রি করা হয়। এই কাজে সড়কের পাঁচ-ছয় ফুট পর্যন্ত জায়গা দখল করে রাখা হয়।
এতে পথচারীদের বিপজ্জনকভাবে সড়কের মাঝামাঝি দিয়ে চলাচল করতে হয়। ছোট যানবাহনকেও মাঝ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী গত এক বছরে এই এলাকায় ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং শতাধিক মানুষ হতাহত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এদের জরিমানা করা হয়েছে, উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর পরও এরা সুযোগ পেলেই আবার রাস্তায় বালু ব্যবসা শুরু করে। আবারও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বালু ব্যবসার প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেই ব্যবসা অবশ্যই সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতির মধ্যে পরিচালিত হতে হবে। সারা দেশে যেভাবে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে, তা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হচ্ছে। প্রতিবছর বহু মানুষ এর ফলে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দখল করে বালুর ব্যবসা চালানো কোনো মতেই কাম্য নয়। অবিলম্বে এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করা হোক।