শুধু বায়ুদূষণের কারণে পৃথিবীতে বছরে ৭০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু হয়। এর একটি বড় অংশ মারা যায় এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। কারণ বিশ্বে বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ।
গত মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার ‘বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০২১’ প্রকাশ করেছে। এতে ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের ছয় হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুমান পর্যালোচনায় বাংলাদেশের এমন অবস্থান উঠে এসেছে। দূষণের শীর্ষে থাকা প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আরো তিনটি দেশ রয়েছে। সেগুলো হলো—পাকিস্তান, ভারত ও নেপাল। আর রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, প্রথম স্থানে আছে ভারতের নয়াদিল্লি। আইকিউএয়ার ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। চার বছর ধরেই বাংলাদেশ এই তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে।
কোনো এলাকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ভেসে থাকা ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের সূক্ষ্ম বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার-পিএম) পরিমাণ কত তার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। বাংলাদেশে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫-এর মাত্রা পাওয়া গেছে ৭৬.৯ মাইক্রোগ্রাম। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানের পিএম ২.৫ মাত্রা ৬৬.৮ মাইক্রোগ্রাম এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা ভারতের মাত্রা ৫৮.১ মাইক্রোগ্রাম। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাতাসে পিএম ২.৫-এর সহনীয় বার্ষিক মাত্রা নির্ধারণ করেছে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম। প্রতিবেদনের সারাংশে বলা হয়, বায়ুদূষণ নানাভাবে মানুষের ক্ষতি করছে।
বায়ুদূষণের কারণে হাঁঁপানি, ক্যান্সার, হৃদরোগ, ফুসফুসের সমস্যাসহ বহু রোগ হয়। বিশ্বে প্রতিদিন অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় প্রায় ৮০০ কোটি ডলার, যা মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের ৩ থেকে ৪ শতাংশ। গত বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী বায়ুদূষণ। গত বছর সবচেয়ে নেতিবাচক বায়ু ছিল মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায়। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ৫০ শহরের মধ্যে ৪৬টিই এই অঞ্চলের।
বাংলাদেশে বায়ুদূষণের একটি প্রধান কারণ যত্রতত্র গড়ে ওঠা ইটখোলা। এগুলোর বেশির ভাগই অবৈধ এবং এগুলোতে ইটখোলা স্থাপনসংক্রান্ত আইন-কানুন প্রায় কিছুই মানা হয় না। অবাধে ব্যবহার করা হয় ড্রাম চিমনি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত যানবাহন। বেশির ভাগ যানবাহন পুরনো ও ফিটনেসহীন। এগুলোর দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। কারখানার বায়ুদূষণও কম নয়। ঢাকায় বা বড় শহরগুলোতে স্থাপনা নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে।
প্রতিদিন বালু নিয়ে শত শত ট্রাক প্রবেশ করছে ঢাকায়। সবই খোলা অবস্থায়। ত্রিপল দিয়ে ঢেকে বালু পরিবহন করার বিধান থাকলেও কেউ তা মানছে না। প্রকৃতিতে খোলা অবস্থায় প্লাস্টিকসহ ময়লা পোড়ানো হয়। নির্মাণকাজেও চলে যথেচ্ছাচার। বিভিন্ন সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই থাকে। ভাঙাচোরা রাস্তায় যানবাহন চলায় ধুলা বেশি ছড়ায়। ঢাকার রাস্তায় পানি ছিটানো হয় না বললেই চলে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বড় শহরগুলোর বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনগুলোকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। কল-কারখানা, ইটখোলাসহ অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য সংস্থাকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।