বাংলাদেশে এই সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি। শুধু নিম্ন আয়ের মানুষ নয়, মধ্যবিত্তকেও পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় এখন বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। মানুষের আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়।
মূল্যস্ফীতির প্রভাব গরিব মানুষের ওপরই বেশি পড়ে। কারণ তাদের আয়ের বড় অংশই চলে যায় খাদ্যপণ্য কিনতে। দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। সামনে রোজা আসছে। সাধারণত রমজান মাসে বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। রোজার মাসে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে পারাও সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এক তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, বিশ্ববাজারের চেয়ে দেশে কিছু পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেশি। সিপিডি বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি বহিঃখাত অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে বৈশ্বিকভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম ওঠানামার সঙ্গে বাংলাদেশও সম্পর্কযুক্ত। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে বাংলাদেশে গরুর মাংস ৫৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে তা বিশ্ববাজারে বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। দেশে যে চিনি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশে প্রতি লিটার ভোজ্য তেল ১৪০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। একইভাবে দেশে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আর থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে সমমানের চাল বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়বে। প্রথমে করোনা পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন সংকট আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়েছে। এমনিতেই বাংলাদেশের বাজারে যখন কোনো পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখানো হয়।
বাজারে জিনিসপত্রের দাম কেন বাড়ে? সাধারণ সূত্র হচ্ছে, চাহিদার সঙ্গে সরবরাহব্যবস্থা কুলিয়ে উঠতে না পারলে বাজারে তার প্রভাব পড়ে। উৎপাদন ব্যয় ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেলে পণ্যের দাম বাড়বে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ।
আবার বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এখন যত দ্রুত সম্ভব নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।