প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসের আগে আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এর মধ্যেই দেশি মসুর ডালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে।
ভোজ্য তেলের দামও বেড়ে গিয়েছিল। সরকার ভ্যাট প্রত্যাহারের কারণে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। নির্ধারিত দামেই বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খোলা তেল লিটারে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। চিকন চালের দাম প্রকারভেদে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চিকন মসুর ডালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, ১০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। রমজান মাসে বেশি ব্যবহৃত হয়—এমন প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। তবে সামান্য কমেছে পেঁয়াজ ও চিনির দাম। এসব পণ্যের দামও যেকোনো সময় বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রমজান-পূর্ববর্তী বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিবছর রমজান শুরুর মাসখানেক আগে থেকেই বাজার অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা শুরু হয়ে যায়। বাজার থেকে অনেক পণ্য উধাও হয়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাজারে সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে না। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অভিযান চালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গুদামজাত করে রাখা লাখ লাখ লিটার তেল উদ্ধার করেছে। প্রতিবছরই রমজানের আগে দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীরা নানা রকম অজুহাত দেন। আর এ বছর অজুহাতের তালিকায় যোগ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
প্রতিবছরের মতো এ বছরও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—বাজারে পর্যাপ্ত মজুদ আছে, দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই। বাস্তবতা হলো দাম বাড়ছে। তবে এ বছর দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আছে মজুদবিরোধী অভিযান, ভ্যাট প্রত্যাহার, নিম্ন আয়ের এক কোটি পরিবারকে ‘ফ্যামিলি কার্ড’-এর মাধ্যমে কম দামে ছয়টি পণ্য সরবরাহ করা, খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির পরিসর বাড়ানো ইত্যাদি। এসব পদক্ষেপের কারণে কিছুটা হলেও সুফল মিলছে। বাজারে কিছুটা হলেও লাগাম টানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষক অনেকেই মনে করেন, বাজারে কারসাজি ঠেকাতে কিংবা সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা রোধ করতে সরকারের নজরদারি ও হস্তক্ষেপ আরো বাড়াতে হবে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অল্প কিছু ট্রাকের মাধ্যমে সরাসরি পণ্য বিক্রির যে উদ্যোগ নেয়, বাজারে তার কোনো প্রভাবই পড়ে না। এটি আরো বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য স্থায়ীভাবে ফ্যামিলি কার্ড বা রেশন কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আমরা আশা করি, ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করে যাবে।