পবিত্র রমজান মাস কাছাকাছি চলে এসেছে। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও পণ্যমূল্য, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। দাম বৃদ্ধির পেছনে যতটা না বাস্তব কারণ আছে, বাজারসংশ্লিষ্টদের ধারণা, তার চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে নানা ধরনের কারসাজি। আর এ কাজে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের অভাব হয় না।
এবারও হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ অনেক অজুহাতই দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, আমদানি নয়, চালসহ দেশে উৎপাদিত অনেক খাদ্যপণ্যেরও দাম বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। সয়াবিন তেল ও পাম তেলে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
আগামী ২০ মার্চ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ভোজ্য তেলসহ ছয়টি নিত্যপণ্য ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে দেওয়া শুরু হবে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে থাকা নানা ধরনের সিন্ডিকেট ভাঙতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও অবৈধ মজুদদারি রোধে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে নানা ধরনের তদারকি শুরু করা হয়েছে। এ কাজে টাস্ক ফোর্স গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট থেকেও গতকাল মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রসচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোজার মাসকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বরাবরই নানা কারসাজির আশ্রয় নেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রতিবছরই বলা হয়, সব পণ্যেরই পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এ বছরও সেই একই কথা বলা হয়েছে। অথচ বাজার ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।
এমন অবস্থায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে জরুরি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে বাজারে তার সুফল ফলতে শুরু করেছে। ভোজ্য তেল, পেঁয়াজসহ কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে দুস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির উদ্যোগটি খুব ভালো একটি উদ্যোগ। ট্রাকে পণ্য বিক্রিতে দেখা যায়, একই ব্যক্তি বারবার পণ্য নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে।
আবার সচ্ছল পরিবার থেকে দারোয়ান বা কাজের মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অথচ অনেক দরিদ্র মানুষ টিসিবির পণ্য পাচ্ছে না। ফ্যামিলি কার্ডে দেওয়া হলে এই সমস্যা থাকবে না। এই ব্যবস্থা স্থায়ী করা গেলে এবং নিম্নমধ্যবিত্তদেরও এতে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে আরো বেশি সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।
পাশাপাশি বাজারের স্বাভাবিকতা রক্ষায় মজুদদারি ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে অভিযানে সারা দেশেই প্রচুর পরিমাণে ভোজ্য তেলের মজুদ পাওয়া যাচ্ছে।
ভোক্তাদের স্বার্থ দেখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ জন্য মজুদদারি, সিন্ডিকেশনসহ দাম বাড়ানোর সব ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করি, আসন্ন রমজান মাসে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।