বাংলাদেশে কোনো মাদক উত্পাদিত হয় না। আইস-ইয়াবা বা ফেনসিডিল তৈরির কাঁচামালও এখানে নিষিদ্ধ। এর পরও মাদকের বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী অভিযান চালিয়েছে, কিন্তু মাদকের কারবার বন্ধ করা যায়নি।
সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিও মাদক আসা, বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ করতে পারছে না। ফলে বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। কিশোর-তরুণদের কাছে মাদক সহজলভ্য হয়ে উঠছে। তরুণী-কিশোরীদের মধ্যেও এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে প্রচলিত মাদকের মধ্যে রয়েছে ফেনসিডিল, ইয়াবা ইত্যাদি। ইদানীং পরিচিতি পেয়েছে আইস নামের এক নতুন মাদক। ইয়াবার উত্স মিয়ানমার। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসে ইয়াবার চালান। এরপর অসংখ্য ছোট ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সেগুলো পৌঁছে যায় দেশের আনাচকানাচে। মিয়ানমার সীমান্তে রয়েছে ইয়াবা তৈরির ৪৯টি কারখানা। নানা উপায়ে ও কৌশল বদল করে ইয়াবা পাচার হয়ে আসছে বাংলাদেশে। গত এক যুগে বাংলাদেশ-মিয়ানমার চারটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এসব কারখানা বন্ধের অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ। ইয়ারা পাচার রোধে বারবার সহযোগিতা চাইলেও মিয়ানমারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পায়নি বিজিবি। কারখানাগুলো বন্ধ না করে উল্টো এখন সেখানে তৈরি হচ্ছে আইস। আইস কারবারিরা বাকিতে এই মাদক বিক্রি করছে। ভারত সীমান্তে চালু রয়েছে ২০টি ফেনসিডিল কারখানা।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক অভিযানের পাশাপাশি কারখানা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। গত বছর ভারতীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোর সঙ্গে বাংলাদেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় ভার্চুয়াল সম্মেলনে উভয় পক্ষ একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। ২০২০ সালে মিয়ানমারের সেন্ট্রাল কমিটি ফর ড্রাগ অ্যাবিউজ কন্ট্রোলের সঙ্গে ডিএনসির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ৩৭টি কারখানা ও ১২টি কারবারির তথ্য দিলেও কারখানা শনাক্ত করে কারবারিদের গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়নি মিয়ানমার।
তরুণসমাজে মাদকাসক্তি ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে মাদক সিন্ডিকেট। মাদকাসক্তরাও জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। মাদকের প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কাজেই মাদক নির্মূলের উত্স বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে মাদক বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ইয়াবা-আইসের রুট শনাক্ত করা আছে। এসব রুটে নজরদারি বাড়াতে হবে।