সারা দেশে হাজার হাজার ইটখোলা রয়েছে। এসব ইটখোলায় ইট তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর মাটির। আর সেই মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত পরিবেশ, প্রকৃতি, এমনকি স্থাপনারও ব্যাপক ক্ষতি করা হচ্ছে। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে থাকা পাহাড় কেটে মাটি নেওয়া হচ্ছে।
ফসলি জমির ওপর থাকা উর্বর স্তরটি কেটে নেওয়ায় জমির ফসল উৎপাদনক্ষমতা কমে যাচ্ছে। নদী বা নদীর পার কেটে মাটি নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে অনেক জায়গায় নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বর্ষায় ভেঙে পড়ছে। সেতুর নিচ থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেতু। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় সরকারের খাসজমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটখোলায়। শুধু মাটি নয়, নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা বাড়ায় বালুর ব্যবসাও জমজমাট। ফলে সারা দেশেই অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের হিড়িক পড়েছে।
এর ফলে বর্ষায় নদীভাঙন তীব্র হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীপারের সাধারণ মানুষ। আবার নদীর জায়গা বা খাসজমি দখল করে পরিচালিত হচ্ছে বালুসহ নানা ধরনের ব্যবসা। প্রকাশিত অন্য এক খবর থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলো গেট এলাকায়ও রয়েছে এমন অনেক ইট-বালুর ব্যবসা। তুরাগ, শীতলক্ষ্যা কিংবা অন্যান্য নদীর তীর দখল করে ইট-বালু-পাথরের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার অনেক খবর আগেও প্রকাশিত হয়েছে; কিন্তু এসব অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নান্দাইলে যাঁর বিরুদ্ধে খাসজমি থেকে ইটখোলায় মাটি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে, তিনি জানান, স্থানীয় ভূমি অফিসকে ‘ম্যানেজ’ করেই তিনি মাটি বিক্রি করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে এই দেড় একর খাসজমি ভোগদখল করে আসছেন। এ ধরনের ম্যানেজের অভিযোগ সারা দেশেই রয়েছে।
শুধু ভূমি অফিস নয়, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অতীতে এমন অনেক অভিযোগ উঠেছে। বেশি জানাজানি হলে কখনো কখনো অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয় এবং কয়েক দিন পরই দেখা যায় আবার একই চিত্র। কিন্তু এসব বন্ধের স্থায়ী কোনো উদ্যোগ খুব একটা চোখে পড়ে না।
পরিবেশ ও প্রকৃতির অনেক ক্ষতি আমরা এরই মধ্যে করে ফেলেছি। সেই ক্ষতি আর বাড়তে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। পাহাড়, বন, নদী, খাল-বিল, জলাশয়, খাসজমি ইত্যাদি রক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
ময়মনসিংহের নান্দাইল ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে খাসজমি দখল ও মাটি কেটে নেওয়ার ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারো কারো বিরুদ্ধে থাকা যোগসাজশের অভিযোগও তদন্ত করে দেখতে হবে।