দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণও আশাব্যঞ্জক। সরকারপ্রধান, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার নারী। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে নারীদের জয়জয়কার।
পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে নারী। শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো করছে। সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের নারী জাগরণ সাড়া ফেলেছে। আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এসেছে। এর পরও কোথায় যেন একটু ফাঁক রয়ে গেছে। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের সমাজের পরিচয় যেন পাল্টে যাচ্ছে। সমাজ থেকে মানবিক মূল্যবোধ উধাও। অবক্ষয় চরমে। নৈতিকতা নির্বাসিতপ্রায়। আগের মতো নেই সামাজিক অনুশাসনও।
কেন বাড়ল সামাজিক অবক্ষয়? ভুল রাজনৈতিক মূল্যবাধই কি এর কারণ? নাকি আরো অনেক কার্যকারণ রয়েছে নেপথ্যে। নারীবান্ধব সমাজ নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতাও কি আশাব্যঞ্জক? একটি বেসরকারি সংস্থার সাম্প্রতিক সময়ের একটি জরিপ যে তথ্য দিচ্ছে তা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। আর প্রশ্নটা এ কারণেই আসছে।
জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ৬৯.৯২ শতাংশ তরুণী দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। জরিপ অনুযায়ী প্রায় ৩৯ শতাংশ তরুণী শৈশবে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন। প্রায় ৪৪ শতাংশ তরুণী অনলাইনে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন ৬৪.৯২ শতাংশ নারী। ঘরেও মানসিক সমস্যায় পড়েন নারীরা। ২২.২৯ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তাঁদের মতামতকে পরিবারে মূল্যায়ন করা হয় না। শুধু নারী হওয়ার কারণে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয় ৪৬.২৫ শতাংশকে।
কেন এমন হচ্ছে? দিন দিন সমাজ এগিয়ে যাবে আলোর দিকে; কিন্তু আমরা কি অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি? সমাজ এভাবে নারীর প্রতি নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে কেন? কেন নারীকে আজকের দিনে এসেও প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে? সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক ধারণার প্রসার ও পৃষ্ঠপোষকতা কি এর জন্য দায়ী। নারীর প্রতি নিগ্রহের বিরুদ্ধে আমরা কেন কঠোর অবস্থানে যেতে পারছি না? নিগ্রহকারীরা কি রাজনৈতিক শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে?
এভাবে আর কত দিন? কবে অবসান হবে এই বর্বরতার? কবে আমাদের সমাজে নারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে এবং পাবে যোগ্য সম্মান?