বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। সেখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে মেধা ও মননের চর্চা হবে, সবচেয়ে পরিশীলিত আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে শিক্ষার্থীরা, সেটাই তো প্রত্যাশিত। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে?
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র্যাগিংয়ের নামে চলছে শিক্ষার্থী নির্যাতন। নতুন শিক্ষার্থীরা তাঁদের হলজীবনের শুরুতেই রীতিমতো উদ্বিগ্ন থাকেন।
হলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ না মানলেই নির্যাতিত হতে হয়। তাঁদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় গেস্টরুমে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গেস্টরুম কালচার এখন পরিচিত শব্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, তাঁদের নানা ধরনের হেনস্তার শিকার হতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের দিকে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল প্রশাসন নয়, বরং রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরাই নিয়ন্ত্রণ করেন আবাসিক হলগুলো।
নবীন শিক্ষার্থীদের হলে থাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশ মানতে হয়। বেশির ভাগ সময়ই হল প্রশাসনের কাছে অভিযোগ আসে না। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, একবার অভিযোগ দিলে পরবর্তী সময়ে তাঁকে আরো বেশি অপদস্থ হতে হবে, আরো সমস্যায় পড়তে হবে।
শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট টর্চার (স্যাট)’ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি আবাসিক হলে গত পাঁচ মাসে ১৮ জন শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নির্যাতনের বেশির ভাগ ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত। বেশির ভাগ ঘটনায়ই প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এদিকে ছাত্রলীগ না করায় ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। কয়েক দশক ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে এক ধরনের অরাজক অবস্থা। আর এতে মদদ জুগিয়ে যাচ্ছে আমাদের নষ্ট রাজনীতি। ছাত্রসংগঠনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাঁরা প্রকৃত অর্থে কিছু ক্যাডার লালন-পালন করছেন। হেন অপকর্ম নেই যা তাঁরা করছেন না। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাঁদের যথাযথভাবে বিচারের মুখোমুখিও করা যায় না। ক্ষমতাসীন দলে থাকলে তাঁরা ধরাকে সরাজ্ঞান করেন।
বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির সুস্থ ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে এই জঘন্য প্রথা বন্ধ হওয়া উচিত। সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।