দেশের দরিদ্র মানুষের কাছে এখনো প্রধান ভরসা সরকারি হাসপাতাল। দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এটাও স্বীকার করতে হবে যে রাষ্ট্র জনগণকে যেসব সেবা দেয় তার মধ্যে সবচেয়ে জরুরি খাতটি হলো স্বাস্থ্যসেবা খাত। অথচ সরকারি চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
এটা এখন স্পষ্ট যে স্বাস্থ্যসেবাপ্রাপ্তিতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ২০১২ সালে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল ৬৪ শতাংশ, ২০১৫ সালে বেড়ে হয় ৬৭ শতাংশ এবং সাম্প্রতিক সময়ে গবেষণায় দেখা গেছে, এই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮.৫ শতাংশ। ক্রমান্বয়ে এই ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনযাত্রার ওপর। ব্যক্তির ওপর চিকিৎসা ব্যয়ের এই চাপ কমাতে ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, ক্রমান্বয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমিয়ে আনা হবে এবং ২০৩২ সালে তা হবে মাত্র ৩২ শতাংশ। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ওই গবেষণায় উঠে আসে যে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ৯৩ শতাংশ রোগীই হাসপাতাল থেকে কোনো ওষুধ পায় না। তাদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ছুটতে হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। প্রকাশিত একটি খবর যেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ওই গবেষণার সত্যতা নতুন করে সামনে নিয়ে এলো।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নানা ধরনের রোগের ওষুধ সংকট চলছে। আন্ত বিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া শেষে প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছে না রোগীরা। এ কারণে বেশি দামে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। এতে দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় রোগীরা চরম বিপাকে পড়েছে। দুই মাস ধরে এই ওষুধ সংকট চলছে। আগের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বাড়ায় এই সংকট দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরাও স্বীকার করেছেন ঠাণ্ডাজনিত রোগের ওষুধ সংকট বেশি। তবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা আশা করছে সংকট দ্রুতই কেটে যাবে।
আমরা আশা করব, রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ওষুধ সংকট কাটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।