গুরুতর অপরাধের ঘটনা যে হারে বাড়ছে, তাতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে হয়।
সমাজের কিছু মানুষ বোধ হয় দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। একের পর এক ঘটতে থাকা খুনখারাবি ও ধর্ষণের ঘটনায় মনে হতে পারে, শিগগিরই সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম ম্রো পাড়ার কার্বারী (পাড়াপ্রধান) লেং রুই ম্রো ও তাঁর চার ছেলেকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এরপর লাশ পাশের ঝিরিতে ফেলে দেওয়া হয়। গত শুক্রবার বিকেলে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ হত্যার বিষয়ে কিছু জানায়নি। অন্যদিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সাতভাইয়াপাড়া গ্রামে গুলিতে তন বিহারী চাকমা নামের একজন নিহত হয়েছেন। সাভারের আশুলিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কাঁথায় মোড়ানো অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার রামনগর গ্রামে এক ব্র্যাককর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে নিখোঁজের তিন দিন পর গত শুক্রবার সকালে বিদেশফেরত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বগুড়ায় বিসিক শিল্পনগরীর নিখোঁজ দুই নৈশ প্রহরীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কক্সবাজারের চকরিয়ায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুই নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বাগেরহাটের কচুয়ায় এক স্কুলছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঘরে ঢুকে ওই ছাত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। অসুস্থ অবস্থায় ওই মেয়েটিকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সমাজের কিছু মানুষ যেন দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। ধারণা করা যেতে পারে, এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ—কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। কিছু মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হতাশা থেকে রাগ ও ধৈর্য হারানোর ঘটনা ঘটছে এখন। ধৈর্যচ্যুতির কারণে অল্পতেই সহিংস হয়ে উঠছে মানুষ। সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে মানুষের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ আরো তীব্র হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দেবে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব অপরাধ থেকে উত্তরণ দ্রুত সময়ে ঘটবে না।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অপরাধপ্রবণতা প্রতিরোধের দায়িত্ব মূলত পুলিশ বাহিনীর। তাদের আরো তৎপর হতে হবে। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অন্যায়কারীর শাস্তি হলে তা দেখে অন্যরা অন্যায় কাজে নিরুৎসাহ হবে। আর সে কারণেই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে।