পাঁচ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুক্রবার ভোরে কুমিল্লার বুড়িচংয়ে একটি মাটিবাহী ট্রাক একটি অটোরিকশাকে চাপা দিলে অটোরিকশার পাঁচ আরোহী নিহত হন। ট্রাকটির রুট পারমিট, ফিটনেস সার্টিফিকেট তো নেই-ই, নিবন্ধন বা নম্বর প্লেটও নেই। চালকেরও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
এর কয়েক দিন আগে কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাবার শ্রাদ্ধের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ফেরার পথে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দ্রুতগামী পিকআপ ভ্যানের চাপায় প্রাণ হারান পাঁচ ভাই। সেই গাড়িটিরও ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না, চালকের ছিল না ড্রাইভিং লাইসেন্স।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এ ধরনের ফিটনেসহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সহীন চালকরা এখন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পাওয়া নিয়েও রয়েছে বিস্তর অনিয়ম। অভিযোগ আছে, গাড়ি চালাতে জানার দরকার হয় না, চাহিদামতো ঘুষ দিলেই চালকের লাইসেন্স পাওয়া যায়। আর গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য গাড়ি দেখানোরও প্রয়োজন হয় না। টাকা দিলেই পাওয়া যায় ফিটনেস সার্টিফিকেট। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে সড়কে চলমান মৃত্যুর মিছিল থামবে কিভাবে?
রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সাতক্ষীরা কার্যালয়ে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ না হলেও সেই অফিসে কেউ নিজে ঘুষ নেন না। গাড়ি নিবন্ধনের জন্য কেউ গেলে আবেদন জমা না নিয়ে শোরুমের মাধ্যমে আসতে বলেন। শোরুমে গেলে অতিরিক্ত চার হাজার টাকা নেওয়া হয়।
শোরুম সূত্রে জানা যায়, সেখানে মাত্র ২০০ টাকা তাঁদের থাকে, বাকিটা দিতে হয় বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তাদে। শুধু শোরুম নয়, অসংখ্য দালালও রয়েছেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরযান রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, শ্রেণি পরিবর্তন, রুট পারমিটসহ অন্যান্য ব্যাপারে দালালদের মাধ্যমে ঘুষ দিয়েই কাজ করাতে হয়।
জানা যায়, অফিস সময়ের পর দালালরা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে টাকার ভাগাভাগি করেন। শুধু সাতক্ষীরা নয়, সারা দেশের বিআরটিএ কার্যালয়গুলোর অবস্থা কমবেশি একই রকম। দালালের মাধ্যমে না গিয়ে কেউ সরাসরি কাজ করাতে গেলে তাঁর শুধু ভোগান্তিই হবে, কাজ হবে না।
সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দুর্বলতাকেই বেশি দায়ী করছেন। তাঁদের মতে, ফিটনেসহীন যানবাহন এবং অবৈধ ও অদক্ষ চালকের কারণেই সড়কে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।
সেই সঙ্গে আছে চালকদের নেশাগ্রস্ততা ও বেপরোয়া মনোভাব। ডোপ টেস্ট প্রচলনের কথা দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে—মহাসড়কে ছোট যানবাহনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের দুর্নীতি ইত্যাদি।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে অনেক আন্দোলন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনেকবার সড়কে অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন ফোরাম থেকে নিরাপদ সড়কের লক্ষ্যে বহু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
কিন্তু সড়কে মৃত্যুর মিছিল কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই। সে ক্ষেত্রে সবার আগে বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঠিক ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।