দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে। একটি তথ্য বলছে, রাজধানী ঢাকায়ই নিবন্ধিত মোটরসাইকেল সাড়ে আট লাখের মতো। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, গত ছয় বছরে দেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে ১৮ লাখের বেশি। দেশে যে পরিমাণ নিবন্ধিত মোটরসাইকেল আছে তা মোট যানবাহনের ৭০ শতাংশ।
প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই একটি মোটরসাইকেল পাওয়া যাবে। মোটরসাইকেল এখন সামাজিক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার রাজধানীতে পেশা হিসেবে অনেকেই বেছে নিয়েছেন রাইড শেয়ারিং। মফস্বলেও অনেক জায়গায় আগে থেকেই মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে দেশে রাইড শেয়ারের পাশাপাশি মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে। রাইড শেয়ারিং এখন অনেকের পেশা। কিন্তু এর সঙ্গে বেড়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ‘৯ ঘণ্টায় মোটরসাইকেলের আট আরোহী নিহত’। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫০.৪৭ শতাংশ, যা আগের বছরে ছিল ১৫ শতাংশ। ২০২১ সালে দুই হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে দুই হাজার ২১৪ জন। সব মিলিয়ে গত তিন বছরে চার হাজার ৬৪৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে চার হাজার ৬২২ জনের। এসব দুর্ঘটনার ৬২ শতাংশই ঘটেছে বেপরোয়া গতির কারণে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটরসাইকেল নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার আগে যাচাই-বাছাই প্রয়োজন। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই মোটরসাইকেল চালকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে লাইসেন্স। আবার দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কঠোর নজরদারি দরকার। সঠিক লাইসেন্স নিশ্চিত করতে হবে। বিআরটিএর নজরদারিতেও ঘাটতি আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, বিআরটিএর পরীক্ষা পদ্ধতি আরো মজবুত করা দরকার। ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষার কারণে অনেক চালকই পার পেয়ে যান।
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন যেসব সুপারিশ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত গতিসম্পন্ন মোটরসাইকেল উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মহাসড়কে মোটরসাইকেলের আলাদা লেন তৈরির পাশাপাশি গণপরিবহন উন্নত ও সহজলভ্য করতে হবে।
দুর্ঘটনা কমাতে প্রয়োজনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে মোটরসাইকেল চালকদের কি প্রশিক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা আছে? চালকদের সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
শুধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নয়, সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সড়ক দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।