স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি-অনিয়মের যেন কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এই সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রায় ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসক থাকেন না। ওষুধ চুরি হয়ে যায়।
বছর না ঘুরতেই সেগুলোর মধ্যে ১৯টি যন্ত্র অচল হয়ে পড়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দুটি যন্ত্র কোনো রকমে সচল করতে পারলেও বাকিগুলো মেরামতের সম্পূর্ণ অযোগ্য বলে জানানো হয়েছে। জানা গেছে, তিন লাখ টাকা বাজারমূল্যের একেকটি যন্ত্র কেনা হয়েছে ১৪ লাখ টাকায়। শুধু তা-ই নয়, হাসপাতালটিতে রি-অ্যাজেন্ট সংকটে চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্যাথলজি পরীক্ষা। ফলে রোগীরা বাধ্য হচ্ছে কয়েক গুণ দাম দিয়ে বাইরে থেকে এসব পরীক্ষা করিয়ে আনতে।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাগুলো কেনা হয়। তখন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ডা. মো. আসাদ হোসেন। হাসপাতাল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্পের পরিচালকও ছিলেন তিনি। তিনি একক সিদ্ধান্তেই নিম্নমানের এসব যন্ত্রপাতি কেনেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। কেনার পর থেকে সেগুলো হাসপাতালের স্টোরে রাখা ছিল।
গত জুলাই মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেলে করোনা ওয়ার্ডে ছয়টি এবং আইসিইউ ও সিসিইউতে বাকিগুলো চালু করতে গিয়ে দেখা যায় ২৪টির মধ্যে ১৯টি ক্যানুলাই কাজ করছে না। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হলে তারা এসে অচলগুলো থেকে মাত্র দুটি ক্যানুলা কোনো রকমে সচল করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে সে দুটিও অচল হয়ে পড়েছে। তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক হাসপাতালে যন্ত্র দেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন, পরবর্তী তিন বছর প্রকল্প থেকে রি-অ্যাজেন্ট সরবরাহ করা হবে।
সাত-আট মাস আগে সেই পরিচালককে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বদলি করা হয়েছে। এখন প্রকল্প থেকে রি-অ্যাজেন্ট দেওয়া হচ্ছে না, হাসপাতালের তহবিলেও রি-অ্যাজেন্ট কেনার মতো অর্থ নেই। তাই বেশ কিছু প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। ফলে সরকারের অর্থ গেলেও জনগণ সেখানে প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছে না। এমন চিত্র কমবেশি সারা দেশেই দেখা যাচ্ছে।
গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনাগুলো অত্যন্ত দুঃখজনক। ক্যানুলা, রি-অ্যাজেন্টসহ অন্যান্য কেনাকাটায় ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে হাসপাতালের প্যাথলজি পরীক্ষা দ্রুত চালু করা হোক।