রাষ্ট্রের সবচেয়ে জরুরি এবং সবচেয়ে অকর্মণ্য সেবা সংস্থার নাম বলতে বললে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাসিন্দারা সম্ভবত ঢাকা ওয়াসা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার নামই বলবে। অতীতে স্বনামধন্য বিভিন্ন সংস্থার পরীক্ষায় এদের সরবরাহ করা পানিতে কলিফর্ম জীবাণুসহ অত্যন্ত ক্ষতিকর নানা জীবাণু পাওয়া গেছে। সেই পানি পান করে বহু মানুষ অসুস্থ হয়েছে। অনেকের মৃত্যুও হয়েছে।
কিন্তু সংস্থা দুটি নির্বিকার। উপরন্তু তারা পানির দাম বাড়িয়েই চলেছে। একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ঢাকা ওয়াসা আবারও পানির দাম বাড়ানোর চিন্তা করছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসাও লোকসানের অজুহাত দিয়ে দাম বাড়ানোর নানা ধরনের তৎপরতা শুরু করেছে।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ঢাকা ওয়াসা প্রথম দফায় পানির দাম বাড়িয়েছিল ২০২০ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় দফায় আবারও দাম বাড়ানো হয় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। দুই দফায় পানির দাম বেড়েছিল আবাসিকে প্রতি এক হাজার লিটারে তিন টাকা ৬১ পয়সা (৩১ শতাংশ)। আর বাণিজ্যিক গ্রাহকদের বেড়েছিল চার টাকা ৯৬ পয়সা (১৩ শতাংশ)। বিশেষজ্ঞরা আবার মূল্যবৃদ্ধির অযৌক্তিক চিন্তা-ভাবনা বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ওয়াসা শুধু যে দূষিত পানি সরবরাহ করছে তা-ই নয়, পানির সংকটও তীব্র। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকায় রাত থেকে পানির পাম্পে লাইন দিতে দেখা যায়। অতীতে কোনো কোনো এলাকা থেকে গ্রাহকরা সরবরাহ করা পানি জার ভর্তি করে ঢাকা ওয়াসার সদর দপ্তরে এসেছে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) সেই পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে পান করানোর জন্য।
যদিও তারা তা পারেনি, তবু এমন প্রতিবাদ সবার যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। সরবরাহ করা পানির মানও বাড়েনি। কিন্তু এর পরও দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে পানির দাম। ওয়াসার ভাষায় এটি হলো ‘উৎপাদন খরচের সঙ্গে পানির দাম সমন্বয়। ’ আর উৎপাদন খরচ কিভাবে বাড়ে তা সাধারণ মানুষ জানতে পারে না।
জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার হালিশহর এলাকায় ১৬০টি মিটার পরীক্ষা করে ১৪৭টিই ত্রুটিপূর্ণ পাওয়া গেছে। এর অর্থ এসব গ্রাহকের অর্থ সঠিকভাবে জমা হয় না, অন্যত্র চলে যায়।
ওয়াসার লোকজনের যোগসাজশে অবৈধ সংযোগ দেওয়ার অভিযোগও আছে। আছে প্রতিটি পর্যায়ে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ। ফলে খরচ তো বাড়বেই। জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার বর্তমান এমডি বারবার মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে ১৩ বছর ধরে সংস্থাটিতে আছেন। এ সময় তাঁর বেতন-ভাতা বেড়েছে ৪২১ শতাংশ। সেই হারে যদি পানির দাম বাড়তে থাকে, তাহলে গ্রাহকরা কোথায় যাবে?
করোনা মহামারির কারণে বহু মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছে। বহু মানুষের আয়-উপার্জন কমে গেছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী।
আবারও বাড়ানো হয়েছে ভোজ্য তেলের দাম। জানা যায়, জ্বালানি তেল, গ্যাসের দাম বাড়ানোরও চিন্তা-ভাবনা চলছে। এই অবস্থায় ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর চিন্তা করাটাও হবে অমানবিক। বরং দুর্নীতি-অপচয় কমানোর মাধ্যমে কিভাবে খরচ কমানো যায় সেদিকেই দৃষ্টি দিতে হবে।