কিছুটা উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় প্রতিবছর শত শত তরুণ অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমান। তাঁদের কেউ কেউ প্রচণ্ড দুর্ভোগ মোকাবেলা করে শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেও অনেকেই তা পারেন না। অনেককেই অত্যন্ত করুণ পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়। সম্প্রতি এমনই করুণ পরিণতির শিকার হয়েছেন কিছু বাংলাদেশি।
অনেক বাংলাদেশিকে লিবিয়া বা অন্য কোনো দেশে নিয়ে জিম্মি করে অর্থ আদায় করার অনেক ঘটনাও খবরের কাগজে এসেছে। তার পরও এত বাংলাদেশি কেন এমন বিপজ্জনক পথে পা বাড়াচ্ছেন? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রগুলো বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে তাদের নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। তারা লোভনীয় চাকরি বা উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণদের প্রলুব্ধ করে এবং বিদেশে পাঠানোর নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে নারীপাচারের ঘটনাও অনেক বেড়েছে। এরা ভালো চাকরির প্রলোভন দিয়ে নারীদের বিদেশে নিয়ে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়।সাধারণত শীতের সময় ভূমধ্যসাগর দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে পাঠানোর প্রক্রিয়াটি খুব কম থাকে। এ বছর তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। শুধু সমুদ্রে নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সীমান্তে জঙ্গল বা জনমানবহীন এলাকায় তুলে দেওয়ার পরও অনেকে প্রচণ্ড শীতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের তরুণরা এসব বিষয়ে অসচেতন বলেই পাচারকারীদের ফাঁদে বেশি করে পা দিচ্ছেন। ভূমধ্যসাগরের সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাটি তারই প্রমাণ। শুধু ইউরোপ নয়, সাম্প্রতিক সময়ে নৌকায় করে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া উপকূলে যাওয়ার ঘটনাও বেড়েছে। বেড়েছে ভারতে নারী ও শিশুপাচারের ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাচার রোধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ মানবপাচারের বড় উৎস হয়ে উঠুক এটা আমাদের কাম্য নয়, কিন্তু বাস্তবতা সেদিকেই যাচ্ছে। দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা পাচারকারীদের সব নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ২০১২ সালে প্রণীত আইনে মানবপাচারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থাকলেও এই আইনে শাস্তির দৃষ্টান্ত খুবই কম। এ ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। একই সঙ্গে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে এবং বৈধপথে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ সম্প্রসারিত করতে হবে।