বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৬ শতাংশের ১ শতাংশ হাওরাঞ্চল। বাংলাদেশের হাওরাঞ্চল বোরো উৎপদনের সবচেয়ে উপযুক্ত এলাকা। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে উঁচু ভূমির আগেই হাওরাঞ্চল বন্যায় তলিয়ে যায়। সুনামগঞ্জের শতাধিক হাওরে প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি কৃষক পরিবার বোরো চাষে জড়িত।
হাওরের একমাত্র ফসলই তাঁদের জীবিকার প্রধান মাধ্যম। এ বছর জেলায় দুই লাখ ২২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৭১৬টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ৪২০টির কাজ শুরু হয়েছে। ২৯৬ প্রকল্পের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। অর্থাৎ হাওরে ৪১.৩৪ শতাংশ বাঁধের কাজ এখনো বাকি রয়েছে। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শতভাগ কাজ শেষ করার কথা।
গত ১৫ ডিসেম্বর স্থানীয় সুবিধাভোগী কৃষকদের দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে কাজ শুরুর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৪২০টি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আর ২৯৬টি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। আবার প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় প্রকল্প গ্রহণ করায় জেলা কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। অন্যদিকে শাল্লা উপজেলায় বাঁধের প্রকল্প গ্রহণে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মামলা করেছেন বলে খবরে প্রকাশ।
বলা হয়ে থাকে, হাওরাঞ্চলে বাঁধের কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা হয় এবং বর্ষার আগে আগে কাজ শুরু করা হয়। আগাম বর্ষা হলে কিংবা উজান থেকে ঢল নেমে এলে হাওর তলিয়ে যায়। সামান্য যে মাটি ফেলা হয় সেগুলো ভেসে যায়। তখন মিলেমিশে সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের পুরো টাকাই ভাগাভাগি করে নেন। কী পরিমাণ কাজ হয়েছে তা তখন আর যাচাই করার সুযোগ থাকে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২৮ ফেব্রুয়ারির সীমাটি কঠোরভাবে পালন করতে হবে। সে পর্যন্ত যতটুকু কাজ হয় ততটুকুই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি কাজ সময়মতো সম্পন্ন না করার জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।
এলাকার লাখ লাখ কৃষকের স্বার্থ নিয়ে এ ধরনের হরিলুট চলতে দেওয়া যায় না। প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হোক। ইচ্ছাকৃত বিলম্বের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।