দেশের মোট খাদ্য চাহিদার একটি বড় অংশই আসে হাওরাঞ্চল থেকে। এখানকার একমাত্র ফসল বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল কয়েক কোটি মানুষ। আগাম বন্যায় প্রায়ই হাওরের এই ধান চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন দেশে যেমন খাদ্য সংকট দেখা দেয়, তেমনি হাওরাঞ্চলের মানুষের দুঃখ-কষ্টের কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না। তাই বাঁধ নির্মাণ করে আগাম বন্যা থেকে কৃষকদের রক্ষার চেষ্টা চলে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী চক্রের অপকৌশলের কারণে সরকারের সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুনামগঞ্জের শাল্লায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে। এক মাস পেরিয়ে গেলেও বাঁধের কাজ এখনো শুরু হয়নি। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা। বাকি সময়ে মানসম্মত নির্মাণকাজ সম্ভব হবে কি? স্থানীয় কৃষকরা তাই জমির ফসল রক্ষা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবন-মরণের সঙ্গে সম্পর্কিত এই বাঁধগুলোর নির্মাণ ও সংস্কার নিয়ে বহুকাল থেকেই চলে আসছে নানা অনিয়ম ও লুটপাট। স্থানীয়রা এ নিয়ে অনেক অভিযোগ করেছে, অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। কিন্তু অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। বলা হয়ে থাকে, বাঁধের কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা হয় এবং বর্ষার আগে আগে কাজ শুরু করা হয়। আগাম বর্ষা হলে কিংবা উজান থেকে ঢল নেমে এলে হাওর তলিয়ে যায়। সামান্য যে মাটি ফেলা হয় সেগুলো ভেসে যায়। তখন মিলেমিশে সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের পুরো টাকাই ভাগাভাগি করে নেন। কারণ কী পরিমাণ কাজ হয়েছে তা যাচাই করার সুযোগ থাকে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২৮ ফেব্রুয়ারির সীমাটি কঠোরভাবে পালন করতে হবে। সে পর্যন্ত যতটুকু কাজ হয় ততটুকুই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি কাজ সময়মতো সম্পন্ন না করার জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। শুধু তাহলেই কাজ বিলম্বিত করার এই অপকৌশল বন্ধ হতে পারে।
শুধু শাল্লার বাঁধই নয়, যত দূর জানা যায়, সুনামগঞ্জের ৪৬টি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে গৃহীত ৭০২টি প্রকল্পের মধ্যে বেশির ভাগ প্রকল্পেরই একই অবস্থা। ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ বিলম্বিত করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন নিয়েও। পছন্দের লোকজন দিয়ে কমিটি গঠন করে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও এমন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এলাকার লাখ লাখ কৃষকের স্বার্থ নিয়ে এ ধরনের হরিলুট চলতে দেওয়া যায় না। প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা হোক। ইচ্ছাকৃত বিলম্বের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।