গত ১০ জানুয়ারি ‘জেলেপাড়ার বিদ্যালয়টিই সেরা’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি অনেকেরই নজর কেড়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের প্রান্ত ঘেঁষা বলেশ্বর নদ পারে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থান। বিদ্যালয়টি উপজেলার মধ্যে পর পর দুবার সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে।
শিশুদের আধুনিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রায় সব সুযোগ-সুবিধার সম্মিলন ঘটিয়ে বিদ্যালয়টিকে স্বপ্নের মতো করে গড়ে তুলেছেন প্রধান শিক্ষক ফরিদ আহম্মদ। সংবাদ প্রকাশের পর বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন বাগেরহাটের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের জেলেপাড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ব্যতিক্রম। কিন্তু আমাদের তো কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা। শিক্ষার মান, শিক্ষকদের দক্ষতা, অবকাঠামো, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিসহ কোনো বিষয়েই আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ধারে-কাছে নেই বাংলাদেশ।
অথচ আমরা সবাই জানি, শিক্ষার মানের উন্নতির প্রথম শর্ত ভালো শিক্ষক। যেকোনো পর্যায়ের শিক্ষকতার চেয়ে প্রাথমিকে শিক্ষকতা কঠিন। স্পর্শকাতর ও কোমলমতি শিশুদের বুঝে শিক্ষা দিতে হয়। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে দেখা যায় চাকরি পেলেই শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। অনেক পরে হয়তো তাঁদের প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেকেই কোনো চাকরি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত শিক্ষকতায় এসেছেন। মেধাবীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে নারাজ। দক্ষ শিক্ষকের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীই দুর্বলতা নিয়ে শিক্ষাজীবনের প্রথম ধাপটি পার করছে। মানসম্পন্ন শিক্ষক না পেলে শিক্ষার মান বাড়বে না।
২০১৭ সালে প্রকাশিত এক খবরে দেখা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে ফিনল্যান্ড উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দেশটির সব প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি। সবই এক মানের। সব স্কুলেরই লক্ষ্য এক। তাই প্রতিযোগিতা নেই। পুরো প্রাথমিক জীবনে কোনো পরীক্ষা নেই। হোমওয়ার্কের বালাই নেই বললেই চলে। সেখানে শিক্ষকদের পেশায় আসার আগে পাঁচ বছরের তাত্ত্বিক শিক্ষা নেওয়া বাধ্যতামূলক। উচ্চ বেতন, পেশার স্বাধীনতা ও সামাজিক মর্যাদার কারণে সেখানে প্রাথমিকে শিক্ষকতার প্রতি মেধাবীরা আকৃষ্ট। সরকার উদ্যোগী হলে প্রাথমিক শিক্ষকতায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করা কি খুব কঠিন?
শুধু সদিচ্ছা থাকলেই উদাহরণ সৃষ্টি করা সম্ভব। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের জেলেপাড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেটা করে দেখিয়েছেন। এমন আরো উদাহরণ সৃষ্টি হোক।