সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দখলদারির সংস্কৃতি বেশ বিস্তৃত হয়েছে দেশে। সুযোগসন্ধানী মানুষেরও অভাব নেই। তারা কখনো বনের জমি, কখনো রেলওয়ে বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থার জমি, কখনো খাসজমি দখল করে নেয়। বাদ যাচ্ছে না সংরক্ষিত বনভূমিও। দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এই দখলদারি। এতে স্থানীয় প্রভাবশালী, রাজনৈতিক প্রভাবশালী, এমনকি এনজিও প্রভাবশালীরাও বড় ভূমিকা রেখেছে; এমনকি সরকারি এক সংস্থার জমি বরাদ্দ নিয়ে আরেক সংস্থা ব্যক্তি পর্যায়ে বরাদ্দ দিয়ে দিচ্ছে।
একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সংরক্ষিত বনের ৩২ একর জমি ৫৮ লাখ টাকায় তিন বছরের জন্য স্থানীয় ব্যক্তিদের চাষাবাদের অনুমতি দিয়েছে বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন। বন বিভাগ বলছে, বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন বনের জমিতে চাষাবাদের অনুমতি দিতে পারে না।
প্রকাশিত খবর থেকেই জানা যাচ্ছে, এ জমি বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের নয়। রাবার চাষের জন্য বন বিভাগ থেকে ১৯৮৯-৯০ সালে জমি বরাদ্দ নিয়েছিল। ১৯৯৩-৯৪ সালে বাগান সৃষ্টির কাজ শুরু করে। এখানে প্রতিটি ব্লকে ৩০০টি করে গাছ ছিল। সন্তোষপুর রাবার কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে প্রায় সাত মাস আগে ৩২ একর বাগানের গাছ কেটে ফেলা হয়। গত মাসে বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন টাঙ্গাইল ও শেরপুর জোন সন্তোষপুর রাবার বাগানের সাতটি প্লটে ৩২ একর জমি সাথি ফসলের জন্য দরপত্র ডাকে। সর্বোচ্চ দরদাতারা ৫৮ লাখ টাকায় ৩২ একর জমি তিন বছরের জন্য চাষাবাদের অনুমতি পান।
এর আগেও অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অন্তত ১৫০ একর জমি অবৈধভাবে দখল করে চাষাবাদ করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দুই বছর আগে চাষ করতে গিয়ে রাতে ৪৬ একর বাগানের শত শত রাবারগাছের চারা ভেঙে ও উপড়ে ফেলে।
গত বছর মার্চে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই দখলদারির বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল। উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তও হয়েছিল। অতীতে বন বিভাগ অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে অনেক মামলা করেছে। অনেক দিন ধরেই সেসব মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। মামলা পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণেও অনেক মামলায় কোনো ফললাভ হয়নি।
আলোচিত রাবার বাগানের জমি বন বিভাগের। এই জমি বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন ইজারা দেয় কী করে? আইন অনুযায়ী এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। বন বিভাগ ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানিয়েছে। এখন দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। অবৈধ দখলে থাকা বনভূমি উদ্ধার করে সেখানে বনায়ন করতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজও করতে হবে।