গণমাধ্যমে প্রকাশিত গত কয়েক বছরের খবরের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে নিরাপদ সড়কের দাবিতেই সবচেয়ে বেশি আন্দোলন হয়েছে। নানা সময়ে আলোচনার শীর্ষে এসেছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের বিষয়টি। আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সড়ক নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করা যায়, এ বিষয়ে অনেক সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সাত বছর ঝুলে থাকার পর ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস হয়েছে, কিন্তু তাতে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি।
গত সোমবার কুষ্টিয়ায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে চার শ্রমিক মারা গেছেন। পৃথক ট্রাকচাপায় মারা গেছে দুই মোটরসাইকেল আরোহী। এ ছাড়া গত রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা, চাঁদপুরের কচুয়া, পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে কলেজছাত্রসহ আটজন। আহত হয়েছে ছয়জন। গত শনিবার রাজধানী ঢাকা, জয়পুরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আটজন নিহত হওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। আহত হয়েছে অন্তত ১২ জন।
প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে সড়কে। বাড়ছে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। এমন অনেক দুর্ঘটনা আছে, যেগুলো নিছকই দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড। লাইসেন্সহীন অদক্ষ অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়। রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি। অনেক চালক রাত-দিন গাড়ি চালান। অত্যধিক ক্লান্তি এবং গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। বহু অনিয়মও ঘটে রাস্তায়। যাদের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা, তাদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
২০২১ সালের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তুলে ধরে নিরাপদ সড়ক চাই সংগঠনটির তথ্য বলছে, গত বছর সড়ক, নৌ ও রেলপথ মিলিয়ে চার হাজার ৯৮৩টি দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৬৮৯ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে আরো পাঁচ হাজার ৮০৫ জন। এর মধ্যে সড়কপথে তিন হাজার ৭৯৩টি দুর্ঘটনায় চার হাজার ২৮৯ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে পাঁচ হাজার ৪২৪ জন। নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী রয়েছে এক হাজার ২৯২ জন।
দেশের সড়ক-মহাসড়কে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার মতো অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতে চাই সদিচ্ছা। চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। সড়কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। অনিয়মকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।