আমাদের দেশের বেসরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে অনেক অভিযোগ আছে। এসব হাসপাতাল শুধু ব্যাবসায়িক দিকটিই প্রাধান্য দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, টাকার জন্য চিকিৎসাধীন যমজ দুই শিশুকে বের করে দেওয়ার পর এক শিশুর মৃত্যু ঘটায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের এক মালিককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। হাসপাতালের মালিক বড় অঙ্কের টাকা আদায়ের জন্য শিশু দুটির মায়ের ওপর নির্যাতনও চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শ্যামলীর এই হাসপাতালটি সম্পর্কে জানা যায়, প্রায় দুই দশক ধরে হাসপাতাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এই হাসপাতাল মালিক আগে আরো পাঁচটি হাসপাতাল চালিয়েছেন। একটি হাসপাতাল চালু করার দুই-তিন বছরের মধ্যেই সেই হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হতো। কারণ এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ এলেই অন্য নামে আবার আরেকটা হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলা হতো।
শুধু রাজধানী নয়, দেশজুড়েই অনেক হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্র নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে গড়ে ওঠা বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান যেমন যথাযথ অনুমোদন বা প্রক্রিয়া পালন করে না, তেমনি যাদের ওপর এসব তদারকির ভার, তাদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। নিয়ম-কানুন ছাড়াই যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব হাসপাতালে রোগীরা আসছে, অর্থ ঢালছে, কিন্তু সুস্থ হচ্ছে না। অনেক হাসপাতালে পূর্ণকালীন কোনো চিকিৎসক থাকেন না। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ডেকে এনে চিকিৎসাব্যবস্থা চালু রাখা হয়।
বাংলাদেশে গ্রাম পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য মানুষ এখনো শহরমুখী। এই সুযোগ নিয়ে গড়ে উঠেছে হাসপাতাল ও ক্লিনিক। যে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার, তা এখনো একটি বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে গণ্য হচ্ছে। সেবার চেয়ে বাণিজ্যিক দিকটাই প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। আবার অনেক প্রাইভেট ক্লিনিকের দালালও রয়েছেন।
দেশে আরো এমন ভুয়া চিকিৎসাকেন্দ্র আছে কি না, সেসবের সুষ্ঠু তদারকি হওয়া দরকার। ভুয়া হাসপাতাল, অসাধু চিকিৎসক চিহ্নিত করে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বন্ধ করতে হবে স্বাস্থ্যসেবার নামে গড়ে ওঠা অমানবিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা। হাসপাতাল-ক্লিনিকের মতো সেবা খাত যেন আর অবৈধ, ভুয়া ব্যক্তির দখলে না থাকে। স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।