নগর পরিকল্পনাবিদদের অনেকে বলে থাকেন, রাজধানী ঢাকা আগুনের এক বড় উৎসর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ২০১০ সালের ৩ জুন এই পুরান ঢাকার নিমতলী এলাকায় রাসায়নিকের গুদামে আগুন লাগার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১২৪ জন। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগেনি সেদিন। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার বনেদি এলাকা চকবাজারে যেন নিমতলীতে ঘটে যাওয়া ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল। সেই রাতে সেখানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৭৬ জনের প্রাণহানি ঘটে।
এসব ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা থেকে যথেষ্ট শিক্ষা নেওয়ার ছিল। অভিজ্ঞতা বলছে, রাজধানীতে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তা সামাল দিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। অপ্রশস্ত রাস্তায় ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ঢুকতে পারে না। কোথাও কোথাও দেখা দেয় পানির অভাব।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, পানির স্বল্পতার কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। সরু রাস্তা দিয়ে পানি বহনকারী গাড়িগুলো প্রবেশ করতে পারে না। বাড়ির রিজার্ভ ট্যাংকগুলোতেও পর্যাপ্ত পানি থাকে না। এ সংকট কাটাতে ফায়ার হাইড্র্যান্ট স্থাপন অতি জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যদি স্ট্রিট ফায়ার হাইড্র্যান্ট থাকত, তাহলে আগুন থেকে অনেক মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা যেত। ফায়ার হাইড্র্যান্ট হচ্ছে পানি সরবরাহের উৎস। কিন্তু এই ফায়ার হাইড্র্যান্ট বসাবে কে? সিটি করপোরেশন বলছে, ওয়াসার লাইন থেকে ফায়ার হাইড্র্যান্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করবে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিস ঠিক করবে কোন স্থানে, কোথায় কোথায় ফায়ার হাইড্র্যান্ট লাগবে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্ট্রিট হাইড্র্যান্ট বসাতে সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার অনুরোধ করা হয়েছে। ওয়াসা বলছে, ঢাকা শহরে তাদের প্রায় ৯০০-এর কাছাকাছি পানির পাম্প স্টেশনে এই ব্যবস্থা আছে। তবে এগুলো পর্যাপ্ত নয়। অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ঘনবসতি এলাকায় এটি সব সময় কার্যকরও নয় বিধায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ফায়ার হাইড্র্যান্ট স্থাপনে প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে।
ভয়াবহ সব অগ্নিকাণ্ডের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন পৃথকভাবে তদন্ত করে বিভিন্ন সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন দেয়। সেবাদানকারী সংস্থাগুলো কয়েকবার ফায়ার হাইড্র্যান্ট স্থাপনের আশ্বাস দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। ঘনবসতি এলাকায়, বিশেষ করে পুরান ঢাকায় ফায়ার হাইড্র্যান্ট বেশি দরকার।