দেশে যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। পাঁচ বছরের শিশুও নিরাপদ নয় নির্যাতনকারীদের থেকে। ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা এখন প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। রাস্তাঘাটে মেয়েদের চলাচল ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে। ঘর থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। এ অবস্থায় কন্যাসন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন মা-বাবা ও স্বজনরা। অনেকেই মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পান এবং নির্ধারিত বয়সের আগেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেন।
এ অবস্থা রাষ্ট্র, সমাজ বা ব্যক্তি কারো জন্য কল্যাণকর নয়। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি সোচ্চার হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিও। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিটির যৌথ বৈঠকে যৌন হয়রানি বেড়ে যাওয়ার জন্য মাদকের অপব্যবহারকে একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণে ডোপ টেস্টের ব্যাপক প্রচলন করাসহ যৌন নির্যাতন রোধে ১২ দফা সুপারিশ করেছে কমিটি।
জানা যায়, সংসদীয় কমিটির যৌথ বৈঠকে করোনাকালে নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গটি উঠে আসে। একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে মোট তিন হাজার ১২৮ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে কমিটি বলেছে, এভাবে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির ঘটনা রাষ্ট্রের সব ইতিবাচক অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। তাই অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সেই লক্ষ্যে কমিটি যে ১২ দফা সুপারিশ করেছে তার মধ্যে আছে—সব থানায় একজন করে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদান, ব্যাপক ভিত্তিতে ডোপ টেস্টের প্রচলন, মাদকের অনুপ্রবেশ রোধসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে জোর দেওয়া, স্কুল-কলেজ এলাকায় এবং ছাত্রীদের চলাচলের পথে বখাটের উৎপাত বন্ধে সিসিটিভি স্থাপন ও পুলিশের কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা এবং ৯৯৯ নম্বরকে আরো বিস্তৃত ও গতিশীল করা। নারী নির্যাতন বন্ধে এর আগে উচ্চ আদালত থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যে ১০ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেসব নির্দেশনা বাস্তবায়নেরও তাগাদা দেওয়া হয় বৈঠক থেকে।
এটা ঠিক, অপরাধ যখন বাড়ে, হাত ধরাধরি করেই বাড়ে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হলেই এমনটা বেশি হয়। তাই যৌন নির্যাতন ও নারীর প্রতিরোধে প্রথমেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হবে।
অপরাধীদের শাস্তি সুনিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে দায়িত্ব পালনে আরো সৎ ও নিষ্ঠাবান হতে হবে। একই সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শক্ত সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।