নাগরিকত্বের একটি প্রমাণ জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ড। যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে এই কার্ডের প্রয়োজন। পাসপোর্ট পাওয়া, ব্যাংকে হিসাব খোলা, মুঠোফোন নেওয়া বা নতুন সিম কার্ড তোলা, বাড়িভাড়া, হোটেলকক্ষ ভাড়া, ট্রেড লাইসেন্স তৈরিসহ আরো অনেক কাজেই এখন এনআইডির প্রয়োজন। গুরুত্ব বুঝতে না পারায় শুরুতে অনেকেই এনআইডি করেননি কিংবা অনেকের এনআইডি কার্ড হারিয়ে গেছে। ফলে এখন অনেকেই নির্বাচন কমিশন অফিসে ধরনা দিচ্ছেন কার্ডের জন্য। কিন্তু সেখানে প্রচুর ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে। আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হয় ১৬ ধরনের প্রমাণসূচক কাগজপত্র। মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। তার পরও অনেকে এনআইডি পায় না।
ঘুষ লেনদেনের অভিযোগও আছে। এনআইডি পাওয়ার ক্ষেত্রে এমন ভোগান্তির সুযোগ নিয়ে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতারকচক্র। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামে মাত্র এক হাজার টাকায় দুই মিনিটের মধ্যে জাল এনআইডি কার্ড করে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ভোগান্তি এড়াতে সাধারণ মানুষও খুব সহজে করে নিচ্ছে এসব কার্ড। বেশি নিচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজন এবং অপরাধীরা। এতে এনআইডি কার্ডের উদ্দেশ্য যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নানা ধরনের হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে।
এনআইডি-সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে বছরের পর বছর গণমাধ্যমে বহু খবর এসেছে। কিন্তু অনিয়ম কমছে না। বরং যত দিন যাচ্ছে অনিয়ম তত বাড়ছে। ২০১৫ সালে এনআইডির অ্যাপ ও তথ্য ধারণ করা ছয়টি ল্যাপটপ হারিয়ে গিয়েছিল নির্বাচন কমিশনের চট্টগ্রাম অফিস থেকে। দীর্ঘদিন থানায় মামলাও হয়নি। এনআইডি কার্ড নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগে এর আগে নির্বাচন কমিশনের স্থায়ী-অস্থায়ী অন্তত আটজন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়।
এসংক্রান্ত পাঁচটির বেশি মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন। নির্বাচন কমিশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে বাইরেও বেশ কিছু সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি তদন্তে উঠে এসেছে, কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষ কিছু লোক ভিপিএনের (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) মাধ্যমে ওয়েবসাইটে ঢুকে দুই মিনিটে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) বানিয়ে দিচ্ছে। দেখে বোঝার উপায় থাকে না এগুলো আসল না নকল। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সূত্রে জানা যায়, অপরাধীরা আত্মগোপনসহ নানা অপরাধে এসব এনআইডি ব্যবহার করে। এগুলোতে ব্যবহৃত নাম-ঠিকানা সবই ভুয়া হওয়ায় অপরাধকারীকে শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ধারাবাহিকভাবে এমন অনিয়ম চলে এলেও তা রোধে গৃহীত পদক্ষেপ খুবই কম। আমরা মনে করি, জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী এই অপরাধ দমনে আরো কঠোর হতে হবে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।