রাজনীতিতে আদর্শ, জনকল্যাণ, আত্মত্যাগ ও নৈতিকতা ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হওয়ায় বাড়ছে অর্থ আর পেশিশক্তির প্রভাব। সমষ্টির কল্যাণের চেয়ে ব্যক্তির উদরপূর্তিই আজ রাজনৈতিক ধারা হয়ে উঠেছে। ফলে টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, লুটপাট, খুনখারাবিসহ হেন অপকর্ম নেই যা রাজনীতির অনুষঙ্গ হয়ে ওঠেনি।
গত ১২ বছরে তৃণমূল পর্যায়ে এমন অনেক ঘটনার উদাহরণ টানা যাবে, যা স্থানীয়ভাবেই শুধু নয়, জাতীয় পর্যায়েও জনপ্রতিনিধিদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। ফেনীর পরশুরামের ঘটনাটি তারই সাম্প্রতিক সময়ের উদাহরণ। সেখানে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ জনপ্রতিনিধির আচরণ। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরশুরামের দক্ষিণ কোলাপাড়ায় পাওনা টাকা চাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মীর্জানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তাঁর ক্যাডার বাহিনীর পিটুনিতে এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন।
মাটির প্রতি, মানুষের প্রতি টান না থাকলে কেউ জনদরদি জনপ্রতিনিধি হতে পারেন না। আমাদের রাজনীতিতে কি আজ জনদরদি রাজনীতিকের অভাব ক্রমেই তীব্র হচ্ছে? জনপ্রতিনিধিদের অনেকের আচরণই সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করে না। অথচ সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি সুস্থ গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত।
জনপ্রতিনিধিদের জনদরদি হতে হবে। জনগণের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে হবে। তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক আচরণ করতে হবে। জনগণ যেন বন্ধু হিসেবে ভাবতে পারে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব জনপ্রতিনিধিদের। প্রত্যেকেই নিজের কাজের প্রতি যত্নশীল হলে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণ কঠিন হবে না।
অথচ আমরা দেখতে পাই স্বাধীনতা লাভের পর গত পাঁচ দশকে সময় যত গড়াচ্ছে ততই যেন জনপ্রতিনিধিরা জনসেবার আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। রাজনীতিও কলুষিত হয়েছে।
প্রধান দলগুলোতে গণতন্ত্র চর্চাহীনতার সুযোগে সুযোগসন্ধানীরা ঢুকে পড়ছে। স্বজনপ্রীতি আর প্রশ্রয়নির্ভর রাজনীতিতে জবাবদিহিও থাকে না। জনপ্রতিনিধিদের দখলবাজি, টেন্ডারবাজির খবর গণমাধ্যমগুলো হাতে তুলে দিলেও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের খুব একটা টনক নড়ে না।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতির গুণগত মানের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের উন্নতি বা অবনতি। রাজনীতি পচনশীল হলে রাষ্ট্র উন্নয়নের বদলে উল্টোপথে হাঁটে। আদর্শভিত্তিক রাজনীতি, সুশাসন ও দেশের উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে চলে। আদর্শচ্যুত রাজনীতিও সমাজ বা রাষ্ট্রকে কিছু দেয় না।
নেতৃত্ব অযোগ্য, অদক্ষ হলে সৃষ্টি হয় নৈরাজ্য। জনপ্রতিনিধিরা জনকল্যাণের পরিবর্তে জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে সেটা কোনো শুভ বার্তা দেয় না।
জনপ্রতিনিধিদের আদর্শ, জনকল্যাণ, আত্মত্যাগ ও নৈতিকতা কি ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে? রাজনীতি কি হয়ে উঠছে বিত্তবৈভব অর্জনের হাতিয়ার?
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অসুস্থ ধারার অনুপ্রবেশ ঘটে গেছে। অন্যের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জনগণের প্রত্যাশার মূল্য দিতে হবে।