আমরা কী খাচ্ছি, সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য ভাত। কিন্তু বাজারে চাল বিক্রি হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে সেই নামে কোনো ধান নেই। গত সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে ইন্টারন্যাশনাল নিউট্রিশন অলিম্পিয়াড উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব জানালেন, মিনিকেট বা নাজিরশাইল নামে কোনো ধান নেই। নাজিরশাইল নামে যে সরু চাল খাওয়ানো হচ্ছে সেটা জিরাশাইল, শম্পা কাটারি—এই দুই ধরনের ধান থেকেই বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে মিনিকেট নামে বিক্রি হচ্ছে বিআর২৮ ও ২৯।
ধান কেটে যে চালই উৎপাদন করা হচ্ছে তার নাম দেওয়া হচ্ছে মিনিকেট। চাল কেটে সরু করা যায় না, পলিশ করে চকচকে করা হয়। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে যশোর-কুষ্টিয়া এলাকায় এখন অনেক ধানের নামও হয়ে গেছে মিনিকেট। ‘ন্যাড়া মিনিকেট’, ‘জিরা মিনিকেট’, ‘সুপার মিনিকেট’, ‘পাঞ্জাব মিনিকেট’, ‘বাসমতী মিনিকেট’ মাঠজুড়ে আবাদ হলেও এসব ধানের মূল নাম জানার উপায় নেই। বাজারে মিনিকেটের ক্রেতা বেশি, তাই মাঠেও ‘মিনিকেটেরই’ ছড়াছড়ি। অথচ এই ‘মিনিকেট’ ধানের কোনো বৈধ অনুমোদন নেই।
আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিকের পাঁচ মৌলিক অধিকারের একটি খাদ্যের অধিকার। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা এর মধ্যেই পড়ে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এ অধিকার বিভিন্নভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। উৎপাদন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপে খাদ্যদ্রব্যে নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। যথাযথ পরিমাণে ব্যবহার করা হয় না বলে তা ক্ষতিকারক। ফলে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও নিরাপদ খাদ্য এখনো মানুষের নাগালের বাইরে।
সাধারণভাবে যেকোনো ধানের সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ ছাঁটাই করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের মিলগুলোতে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাঁটাই করে মিনিকেট নাম দিয়ে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে পুষ্টিঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আর সে কারণে সরকার একটি ছাঁটাই নীতিমালা করছে। ব্যবসায়ীরা যেকোনো ব্র্যান্ডের নামে চাল বিক্রি করতে পারবেন।
তবে কোন জাতের ধানের চাল ওই নামে বিক্রি করা হচ্ছে তা বস্তায় লিখে দিতে হবে। চালের ব্র্যান্ড নাম যা-ই হোক, বস্তার ওপরে অবশ্যই ধানের নাম লিখতে হবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তটি প্রশংসনীয়। তাতে ক্রেতার প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। তবে সে ক্ষেত্রে বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।