বাংলাদেশে প্রতিবছর লঞ্চ দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন, চালকের দক্ষতা বা অভিজ্ঞতার অভাব, অসতর্কতা, লঞ্চের ত্রুটিপূর্ণ নকশা বা সঠিক নকশা অনুযায়ী লঞ্চ তৈরি না করা, লঞ্চের ফিটনেস তদারকির অভাব ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের নদীপথে দুর্ঘটনা ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা জানেন, একটি জাহাজের নিরাপদ চলাচলের জন্য যথেষ্ট রিজার্ভ বায়ন্সি থাকা প্রয়োজন। আবার রিজার্ভ বায়ন্সি অতিরিক্ত রাখা যাবে না। বাংলাদেশে যেসব লঞ্চ তৈরি করা হয়, তাতে বেশি পরিমাণ যাত্রী নেওয়ার জন্য ডেকের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে ভারসাম্য নষ্ট হয়।
প্রতিটি দুর্ঘটনার পর এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এসব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে একাধিক সুপারিশও থাকে। গত বছর বুড়িগঙ্গা নদীতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষের পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ২০ দফা সুপারিশ করেছিল। তাতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, তা মেনে চলা হয় না।
এসব দেখারও বোধ হয় কেউ নেই। সুপারিশে বলা হয়েছিল, ‘সাংকেন ডেক’ লঞ্চ পর্যায়ক্রমে উঠিয়ে দিতে হবে। প্রশস্ত ও ব্যস্ত নদীতে এ ধরনের নৌযান চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রশস্ত ও ব্যস্ত নদীতে যথাযথ সনদধারী মাস্টার ও ড্রাইভার ছাড়া নৌযান পরিচালনা করা যাবে না। ডিসপেনসেশন সনদের প্রথা বাতিল করতে হবে। নৌকর্মীদের প্রশিক্ষণ ফলপ্রসূ করার জন্য বিআইডাব্লিউটিএকে আরো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। নৌযানের ফিটনেস ও নৌকর্মীদের যোগ্যতা সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে আরো কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।
কিন্তু এসব কি মেনে চলা হচ্ছে? কালের কণ্ঠে গত শনিবার প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে ঝুঁকির মুখে নিয়মিত চলাচল করছে। যাত্রী নিরাপত্তায় প্রতিটি লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকার কথা থাকলেও অনেক লঞ্চেই তা নেই। প্রশিক্ষিত মাস্টারের (চালক) বদলে অনেক লঞ্চ চালাচ্ছেন অনভিজ্ঞ হেলপার।
এতে যেকোনো সময় নৌদুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে অনেকটা উদাসীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। খবরে আরো বলা হয়েছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলাচলকারী ওই লঞ্চগুলোর বেশির ভাগই ৩৫ থেকে ৪২ বছরের পুরনো। প্রায় অকেজো হয়ে পড়া এসব লঞ্চের ওপরে চকচকে বাহারি রঙের প্রলেপ থাকলেও ইঞ্জিনসহ ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই জোড়াতালি দেওয়া।
শুধু দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ রুট নয়, সব নৌপথে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে নিয়ম মেনে সব নৌযান চলাচল করছে। নিশ্চিত করতে হবে সব নৌযানের ফিটনেস। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।