বেশ কিছুদিন থেকেই দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। গুরুতর অপরাধের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা, বাড়ছে নৃশংসতা। কিছু মানুষও যেন দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাড়ছে অপরাধ। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পাবনার ঈশ্বরদীতে নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর এক যুবকের ১০ টুকরা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, রংপুর, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া, গোপালগঞ্জ, নরসিংদীর রায়পুরা ও শেরপুরের ঝিনাইগাতী থেকে আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মাদারীপুরে ক্রিকেট খেলা নিয়ে একজনকে হাতুড়িপেটা করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ছেলের হাতে খুন হয়েছেন এক মা। নরসিংদীতে পারিবারিক কলহের জের ধরে গত রবিবার রাতে এক নারী ও তাঁর শিশুপুত্রকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বগুড়ার শেরপুরে বৃদ্ধ বাবাকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে ছেলে। খুলনার বটিয়াঘাটায় গত সোমবার ভোরে এক নারীকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব নৃশংস ঘটনায় দেশের সচেতন মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন উঠবে, হঠাৎ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতি ঘটল কেন? কেন খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না? ধারণা করা যেতে পারে, এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ—কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না।
মানুষের মধ্যে অস্থিরতাও বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায়, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। কিছু মানুষের মধ্যে নৈতিকতা বলতে কিছু নেই। দেশে মূল্যবোধের অবক্ষয় এক দিনে হয়নি। সামাজিক অসহিষ্ণুতাও অপরাধপ্রবণতার জন্য দায়ী।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে মানুষের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ আরো তীব্র হবে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকলে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমেই বাড়বে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, তুচ্ছ কারণে এসব অপরাধ থেকে উত্তরণ দ্রুত সময়ে ঘটবে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অন্যায়কারীর শাস্তি হলে তা দেখে অন্যরা অন্যায় কাজে নিরুৎসাহ হবে। আর সে কারণেই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। অপরাধীদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে।
আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করব, কর্তৃপক্ষ সব দিক বিবেচনায় রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।