চিকিৎসাকে বলা হয় মহান পেশা। এখানে আর্তমানবতার সেবা করা হয়। নিজের সব প্রচেষ্টা দিয়ে একজন চিকিৎসক একজন অসুস্থ বা মুমূর্ষু মানুষকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করেন। তাই এ পেশায় প্রবেশের আগে একজন চিকিৎসককে মানবিকভাবে সেবা প্রদানের শপথ করতে হয়। কিন্তু বাস্তবে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যেখানে মানবিকতার ছিটাফোঁটাও দেখা যায় না। তখন আমরা অবাক হই। দুঃখ পাই। তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জের এক বেসরকারি ক্লিনিকে।
সেখানে শুক্রবার দিবাগত রাতের শেষ দিকে বা ভোরে এক প্রসূতি মায়ের সিজারিয়ান অপারেশন বা অস্ত্রোপচার করা হয় এবং এক সুস্থ কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। এ সময় চিকিৎসক প্রসূতির পেটে একটি টিউমার দেখতে পান। তিনি সেই টিউমার অপসারণের জন্য বাড়তি তিন হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু এত রাতে সেই টাকা জোগাড় করতে পারেননি সেখানে উপস্থিত রোগীর স্বজনরা। তাঁরা কথা দেন, সকালেই তাঁরা টাকা দিয়ে দেবেন।
কিন্তু চিকিৎসক সে কথা শোনেননি। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর পেটে টিউমার রেখেই সেলাই করে দিয়ে চিকিৎসক চলে যান। এখানে মানবিকতার কোনো ছিটাফোঁটা আছে কি? এই চিকিৎসক যা করেছেন, তাকে ‘মহান পেশা’ বলা তো দূরে থাক, দায়িত্ববোধসম্পন্ন আচরণ বলা যাবে কি?
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, প্রসূতি আফরোজা আক্তারের বাড়ি জেলার সাটুরিয়া উপজেলার নয়াডিঙ্গী গ্রামে। শুক্রবার দুপুরে তাঁকে মানিকগঞ্জ শহরের হেলথ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ২টার দিকে তাঁর প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। তখন অস্ত্রোপচারের জন্য আনা হয় অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. খায়রুল আলম ও একজন অবেদনবিদকে। ৪৫ মিনিট পর শুরু হয় অস্ত্রোপচার।
কন্যাসন্তান জন্মানোর পরই চিকিৎসক জানান টিউমারের কথা। এত রাতে রোগীর স্বজনরা অসহায় হয়ে পড়েন। সকালে অর্থ পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁরা টিউমারটি অপসারণের জন্য আকুতি জানান। হেলথ কেয়ারের মালিকও সকালে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু চিকিৎসক খায়রুল কারো কথাই শোনেননি।
রোগীর পেটে টিউমার রেখেই সেলাই করে চলে যান। মানিকগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. লুত্ফর রহমানও ঘটনাটিকে ‘অমানবিক’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, এ ব্যাপারে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আমরা মনে করি, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। অস্ত্রোপচারের আগে কেন টিউমার ধরা পড়েনি, অস্ত্রোপচারের জন্য এই চিকিৎসক ও অবেদনবিদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছিল কি না, অস্ত্রোপচার জরুরি ছিল কি না, ক্লিনিকটি এ ধরনের রোগী ব্যবস্থাপনার উপযুক্ত কি না—সব বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে।
শুধু মানিকগঞ্জের এই একটিই নয়, সারা দেশে এমন অনেক অভিযোগ শোনা যায়। চিকিৎসার নামে অমানবিকতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে।