রাজধানীর গণপরিবহনে কোনোভাবেই শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হতে থাকে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সরকার ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া ২৬.৫ শতাংশ বাড়িয়ে ভাড়ার নতুন হার নির্ধারণ করে দেয়।
কিন্তু সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া আগের মতোই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। বাস্তবে দেখা যায়, অনেক বাসেই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কিছু বাস গেটলক, সিটিং ইত্যাদি নাম দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে থাকে। বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙিয়ে রাখার কথা থাকলেও অনেক বাসে তা করা হয় না। এরাও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
আবার সিএনজিচালিত বাসগুলো নানা কৌশলে ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া আদায় করে। বাসভাড়া নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই যাত্রী ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা, এমনকি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠলে মাঠে নামেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে গত ৮ নভেম্বর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা শুরু করে বিআরটিএ।
রাজধানী ও চট্টগ্রাম নগরে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কি না, তা দেখেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি ধরা পড়ে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দায়ে বিভিন্ন সময় বাসকে জরিমানা করা হয়।
এতেও থামেনি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। একাধিকবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মতো অপরাধ করায় তাই ১৬৫টি বাসের রুট পারমিট বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
বিআরটিএ বলছে, এই ১৬৫টি বাস ২৫ কম্পানির অধীনে রাজধানীতে চলাচল করছে। এসব বাসের রুট পারমিট বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি) কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে কোনো শৃঙ্খলা নেই। এখানে বাসগুলো পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চলে। একটি বাস আরেকটি বাসকে ধাক্কা দেয়। এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ২০০৪ সালে ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিশেষ এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় বাস তুলে নেওয়া। রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা ও যানজট নিরসনে বাস রুট রেশনালাইজেশনের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরুর কথা ছিল গত ১ ডিসেম্বর। কিন্তু বাস মালিকদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে নগর পরিবহনের বাস চালু করা যায়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে, রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির কাছে সুপারিশ করেছে, সেই সুপারিশ আদৌ কার্যকর হবে কি না। আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি কি সক্রিয় হবে?