চট্টগ্রাম মহানগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৭টি খাল ও বহু নালা-নর্দমা রয়েছে। এর প্রায় সবই অরক্ষিত। প্রায় সবই একেকটি মৃত্যুফাঁদ। উন্মুক্ত এসব খালে পড়ে প্রায়ই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত পাঁচ মাসে নারী-শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এবং একজন নিখোঁজ রয়েছে। ধারণা করা হয়, তারও মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু এখনো লাশ পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ গত সোমবার ষোলশহরের চান্দগাঁও এলাকায় চশমা খালে পড়ে এক শিশু নিখোঁজ হয়। তিন দিন খোঁজাখুঁজির পর বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মুরাদপুর এলাকায় মির্জা খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা এসব মৃত্যুর জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অবহেলাকেই বেশি দায়ী করছেন।
জানা যায়, খালগুলোতে কোনো সীমানাপ্রাচীর, এমনকি কোনো বেষ্টনী পর্যন্ত নেই। শিশুরা খেলতে খেলতে পড়ে যায়। বর্ষাকালে সড়ক ও খাল একাকার হয়ে যায়। তখন চেনার উপায় থাকে না কোনটা সড়ক আর কোনটা খাল। ফলে বড়রাও প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন। সড়কের পাশে বড় যে নালাগুলো রয়েছে সেগুলোও কম বিপজ্জনক নয়। বেশির ভাগ নালায়ই কোনো স্ল্যাব নেই।
ফলে সেগুলোতে যানবাহন পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। গত ৩০ জুন দুই নম্বর গেট এলাকার মেয়র গলিতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নালায় পড়ে গেলে রিকশার আরোহী খাদিজা বেগম এবং চালক সুলতানের মৃত্যু হয়। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার সমস্যাও অনেক বেড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। আবার সাগর কাছে হওয়ায় অনেক সময় জোয়ারের পানিও জলাবদ্ধতাকে দীর্ঘায়িত করে।
নগর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জরুরি ভিত্তিতে সীমানাপ্রাচীর কিংবা আরসিসি পিলারের বেষ্টনী দিয়ে নগরীর প্রতিটি খালের নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন। বড়-ছোট সব নালাই স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি ২০১৮ সাল থেকে সিডিএ যেভাবে ঢিমেতালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করে চলেছে, তাকে গতিশীল করা প্রয়োজন।
চসিক হোক আর সিডিএ হোক—সবারই লক্ষ্য হওয়া উচিত নাগরিকদের নিরাপত্তা ও উন্নত সেবা প্রদান। নগরীর খাল-নালা পাঁচ মাসে ছয়জন মানুষের জীবন কেড়ে নেবে এবং তার প্রতিকার না করে একে অপরকে দোষারোপ করবে, তা কখনো কাম্য হতে পারে না।
আমরা আশা করি, সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে চট্টগ্রাম মহানগরের সব খাল ও নালা-নর্দমায় সীমানা দেয়াল বা বেষ্টনী তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হবে, যাতে আর একটি প্রাণও এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার না হয়।