জনগণের যাতায়াতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে দেশে রেলপথ বাড়ছে। রেলপথে যাত্রীর চাপ থাকায় বাড়ছে ট্রেনের সংখ্যা। তার চেয়েও বেশি বাড়ছে সড়কপথ। সংগত কারণেই সড়ক ও রেলপথের ক্রসিং বা লেভেলক্রসিংয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু বেশির ভাগ লেভেলক্রসিংই অরক্ষিত।
গেটম্যান নেই, প্রতিবন্ধক নেই। আবার যেখানে গেটম্যান আছে, সেখানেও দেখা যায় দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে। এ কারণে সড়কের পাশাপাশি রেলপথেও বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শনিবার সকালে চট্টগ্রামের খুলশি লেভেলক্রসিংয়ে ডেমু ট্রেনের সঙ্গে অটোরিকশা, টেম্পো ও হিউম্যান হলারের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন ট্রাফিক পুলিশ, একজন প্রকৌশলী ও একজন কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়।
গুরুতর আহত পাঁচজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। রবিবার সকালে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার খানাবাড়ি রেলস্টেশনসংলগ্ন লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় একজন ইজি বাইকচালকের মৃত্যু হয়। গতকাল সোমবার ভোররাতে নাটোর শহরের তেবাড়িয়া রেলগেটে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের সঙ্গে একটি মিনি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। ট্রাকের চালক ও হেলপার আগেই নেমে যাওয়ায় এখানে কেউ হতাহত হয়নি।
সামনে গাড়ি আছে কী নেই, মানুষ আছে কী নেই, সেসব দেখে ট্রেন চালানো প্রায় অসম্ভব। সে জন্য লেভেলক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধক ও গেটম্যান রাখা হয়। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরাখবর থেকে জানা যায়, সারা দেশে লেভেলক্রসিং রয়েছে দুই হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য গেটম্যান আছে মাত্র ৩৭১টি লেভেলক্রসিংয়ে।
বাকি দুই হাজার ১৭০টি লেভেলক্রসিং অরক্ষিত বা সব সময় খোলা থাকে, যার মধ্যে ১০৪২টি লেভেলক্রসিং রেলওয়ের অনুমোদিত, বাকিগুলো অননুমোদিত। কিন্তু যেগুলো অনুমোদিত, সেগুলোতেও নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই কেন? আর অননুমোদিত লেভেলক্রসিংয়ে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে তার দায়িত্ব কে নেবে?
কিছু লেভেলক্রসিংয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে বলা হয়েছে, ‘এখানে কোনো গেটম্যান নেই, পথচারী ও সকল যানবাহন চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করুন…।’ এতেই কি রেলওয়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? গাড়িচালক ও পথচারীদেরও আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। জানা যায়, খুলশি লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেন আসতে দেখে একটি অটোরিকশা ও একটি টেম্পো আগে থেকেই দাঁড়িয়েছিল।
এ সময় পেছন থেকে একটি হিউম্যান হলার এসে সজোরে ধাক্কা দিলে অটোরিকশা ও টেম্পোটি গিয়ে ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং দুমড়েমুচড়ে যায়।
ঘটনার পরপরই হিউম্যান হলারের চালক পালিয়ে যায়। জানা যায়, এই চালক গাড়িটির আসল চালক ছিল না। আবার লেভেলক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধক থাকলেও এক পাশ খোলা ছিল। এ কারণে গেটম্যানের বিরুদ্ধেও অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। গেটম্যানও পলাতক রয়েছেন।
বাস্তব প্রয়োজনেই রেলপথ-সড়কপথ বাড়াতে হবে। আরো বেশি লেভেলক্রসিং তৈরি হবে। সেগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। কোথাও কোনো লেভেলক্রসিং অপ্রয়োজনীয় মনে হলে তা বন্ধ করে দিতে হবে; কিন্তু কোনোক্রমেই কোনো লেভেলক্রসিং অরক্ষিত রাখা যাবে না।