শিক্ষা-গবেষণা এবং আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নিয়ে গত ১ জুলাই প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্ণ করে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। ২, ৩, ৪ ও ১২ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে রয়েছে নিয়মিত আয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্ণ করা নিঃসন্দেহে উৎসব ও আনন্দের সঙ্গে এক গৌরবময় অতীতকে স্মরণ করার দিন। কিন্তু ফেলে আসা ১০০ বছরে বাংলাদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে কী ভূমিকা রাখল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়? দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠটির শিক্ষার আদর্শ পরিবেশ কি নিশ্চিত করা গেছে?
নাকি বিদ্যাচর্চার চেয়ে বিদ্যাজীবিতার রাজনীতি এখানে বড় হয়ে উঠেছে? শিক্ষা ও আবাসনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই, এটা সত্য। ছাত্র-শিক্ষক সৌহার্দ্য কি আগের মতো আছে? পাঠে ও পাঠদানে মনোযোগ কি লক্ষণীয়? শতবর্ষে এসে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
বিশ্বকে তথা জ্ঞানবিশ্বকে ধারণ করে শিক্ষাদান ও শিক্ষার প্রসার ঘটাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ সময় দায়িত্বটি সুচারুরূপে পালনও করেছে। প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞান, মুক্তবুদ্ধির বিকাশ, সংস্কৃতিচর্চার যে ধারায় সচল ছিল, তা বহমান থাকলে শতবর্ষী এই প্রতিষ্ঠান হয়তো সত্যিকার অর্থেই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে আজ বিবেচিত হতো।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, উন্নয়নের প্রবাহটি বেগবান না হয়ে অনেক ক্ষেত্রে পশ্চাদমুখী হয়েছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ছায়া ফেলেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসনব্যবস্থাটিতে এক শ্রেণির ছাত্রনেতার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
একের পর এক নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে অবকাঠামো সুবিধা না বাড়িয়েই। প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোও অনেকটাই নিষ্প্রভ। দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের উচ্চশিক্ষাদানের দায়িত্ব যে প্রতিষ্ঠানটির কাঁধে তার দুর্বলতা তো জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। অথচ প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞান, মুক্তবুদ্ধির বিকাশ, সংস্কৃতিচর্চার ধারায় সচল ছিল।
সেই ধারাটি বহমান থাকলে শতবর্ষী এই প্রতিষ্ঠান হয়তো সত্যিকার অর্থেই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে আজ বিবেচিত হতো। আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে বলে শোনা যায়।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী? গত জানুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লেখা এক প্রবন্ধে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুতে যেমন ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়েছে, তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনির্মাণে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন।’ সোজা কথায় সরকারকে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দিয়ে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষকদেরও দায়িত্ব পালন করতে হবে আন্তরিকভাবে। হলগুলোর শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের অমিত সম্ভাবনার অপচয় ঘটবে। আর এসব শর্ত পূরণ হলেই প্রতিষ্ঠাকালীন মিশন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ফিরে পাবে ঐতিহ্য।