নিষ্ঠুরতা, খুনখারাবি, আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারসহ ভয়ংকর সব অপরাধ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পত্রিকার পাতা খুললেই এমন সব খবর চোখে পড়ে, যাতে মানবিক বোধসম্পন্ন প্রত্যেক মানুষের হূদয় দুমড়েমুচড়ে যায়। যৌন নিপীড়নের পর হত্যা, গলা কেটে হত্যা, কুপিয়ে হত্যা, টুকরা টুকরা করে হত্যা, পুড়িয়ে হত্যা—যেন নিষ্ঠুরতম কায়দায় খুন করার প্রতিযোগিতা চলছে।
গত বুধবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর দেশীপাড়া এলাকা থেকে মা ফেরদৌসী বেগম (২৮) ও তাঁর মেয়ে তাসমিয়া আক্তারের (৪) গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের রতনপুর ইউনিয়নের খাগাতুয়ার বাজারে অনেক লোকের সামনে মাসুদ মিয়া (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে ও রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার রাত ৮টার দিকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে রিকশা থেকে নামিয়ে যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। মৃত ভেবে ফেলে রেখে গেলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। কয়েক দিন আগে জেলেদের হামলায় আহত পুলিশ কনস্টেবল কবির হোসেন (৪২) বুধবার রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা তো আছেই। জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর জামপুর ইউনিয়নে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হলেও তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পান। সেখানে সংঘর্ষে আহত হন ১৫ নেতাকর্মী।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নে নির্বাচনী সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া আরো চার জেলায় আহত হয়েছে ১৬ জন। একই দিনের পত্রিকায় বেশ কয়েকটি ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর ছুরিকাঘাতের খবর রয়েছে।
কুমিল্লা মহানগরীতে দিনের বেলায় গুলি করে কাউন্সিলর ও তাঁর এক সহযোগীকে হত্যার রেশ এখনো কাটেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ঘটনার সময় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে আশপাশের বাড়িঘর লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। এর পরও কি আমরা বলব, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে? জানা যায়, গাজীপুরে নিহত ফেরদৌসী বেগমকে পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নেওয়া হয়েছিল।
সন্ধ্যা ৭টায় ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে লোকজন পুলিশকে লাশ পড়ে আছে বলে খবর দেয়। মহানগরীর ব্যস্ত সড়কে বিকেলে বা সন্ধ্যায় যদি সন্ত্রাসীরা এমন বেপরোয়া হামলা চালাতে পারে, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা আছে—এমন কথা বলব কী করে? মহেশখালীতে যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীর ওপর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে সেই মামলার আসামির সন্তানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি দ্রুত তদন্তের দাবি রাখে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তেমনটি হয় না বলেই নৃশংস অপরাধ ক্রমেই বাড়ছে। আমরা দ্রুততম সময়ে প্রতিটি ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।