অনেক চিকিৎসক প্রয়োজন ছাড়াই রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। আবার ওষুধের দোকানগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কেনার জন্য কোনো প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয় না। এই সুযোগে বহু মানুষ কোনো উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে থাকে। অনেকেই অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পন্ন করে না। এসব কারণে ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংসকারী অনেক অ্যান্টিবায়োটিক এরই মধ্যে তাদের জীবাণু ধ্বংস করার ক্ষমতা হারিয়েছে বা জীবাণুরা ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। একইভাবে আরো অনেক অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারানোর পথে রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিকের সংকট দেখা দিতে পারে। তখন সাধারণ রোগ-জীবাণুতেও বহু মানুষের মৃত্যু হবে এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে এক ধরনের অসহায়ত্ব তৈরি হবে। এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার মিলনায়তনে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সমস্যা: প্রতিকার ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা অবিলম্বে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠিত আলোচনায় বক্তারা অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের নানামুখী ক্ষতি তুলে ধরে বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ ও বিপণন সুশৃঙ্খল করার উদ্যোগ নিতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষ, মাছ ও পশুপাখিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সার্ভেইল্যান্স কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে একটি জাতীয় নীতিমালা তৈরি করে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে অ্যান্টিবায়োটিক অপব্যবহারের নানা দিক। মঙ্গলবার ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়।
তাতে বলা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায়ও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক অপব্যবহার হয়েছে। ৮৭ শতাংশের বেশি করোনা রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে, যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন ছিল সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ রোগীর। অ্যান্টিবায়োটিকের এত বড় অপব্যবহার হয়েছে চিকিৎসকের হাত দিয়েই। আবার গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, ৩৩ শতাংশ রোগী হাসপাতালে আসার আগে কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়েছে। গবেষকদের মতে, অ্যান্টিবায়োটিকের এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার অবশ্যই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বাড়াবে।
অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনে মান নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বোতল বা প্যাকেটে এমনভাবে অ্যান্টিবায়োটিক বাজারজাত করতে হবে, যাতে সবাই সম্পূর্ণ কোর্সের অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে বাধ্য হয়। কোনো দোকানে প্যাকেট খুলে খুচরা বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। চিকিৎসক, রোগী ও ওষুধ বিক্রেতা সবাইকে সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে। নীতিমালা ভঙ্গ করা হলে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থাও থাকতে হবে।